ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোস্তফা আজিজ সুমন কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
দেশের প্রখ্যাত এই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বাংলানিউজকে বলেন, ক্যানসার বিষয়ে অনেক আগে থেকেই আলোচনা, লেখালেখি, ব্লগ, সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা বাংলাদেশে হয়েছে এবং হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনও আমাদের দেশের মানুষের যদি ক্যানসার শনাক্ত হয়– শনাক্ত রোগীদের মধ্যে যারা একটু অবস্থাপন্ন তারা পার্শ্ববর্তী দেশ, যেমন ভারত অথবা থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুর যে যার সামর্থ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বাইরে চিকিৎসা করতে যান। কিন্তু কেন? আমরা বাংলাদেশের চিকিৎসকরা কি আসলেই ক্যানসার চিকিৎসায় বিশ্বমানের চিকিৎসা দিতে অনুপযুক্ত?
সাধারণ রোগীদের এসব জিজ্ঞাসার সমাধানে শিগগির ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোস্তফা আজিজ সুমন সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে বেশকিছু সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একাধারে ইউনাইটেড হসপিটাল ও ল্যাব এইড ক্যানসার কেয়ারের কনসালটেন্ট এই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ দেশে ক্যানসার ও এর সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে রোগী, বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে সমন্বয়ের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন।
ডাক্তার সুমন বলেন, মূল ধারার মিডিয়ার পাশাপাশি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমের একটি রোডম্যাপ ক্যানসার রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
তিনি বলেন, রোগীদের আমাদের দেশের চিকিৎসকদের প্রতি কনফিডেন্স নেই কেন? এটা ভাবনার বিষয়। চিকিৎসকরা সামগ্রিকভাবে কি এই আস্থা অর্জন করতে পারেন নাই? নাকি রোগীদের ভুল ধারণা? না অন্য কোনকিছুর ঘাটতি আছে সেটা সঠিকভাবে নিরূপণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়গুলো আসলে আলোচনা করা জরুরি যে, কোথায় আমাদের সীমাবদ্ধতা, কোথায় আমরা পিছিয়ে আছি, রোগীদের সঙ্গে আমাদের চিকিৎসকদের বোঝার দূ্রত্বটা কত।
তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে যাচাই বাছাই করা ও গঠনমূলক আলোচনাই ক্যানসার সচেতনতার মূল উদ্দেশ্য হওয়া বলে আমি মনে করি।
কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালের ক্যানসার বিভাগীয় প্রধান এবং ইউনাইটেড ও ল্যাব এইড হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুমন বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ক্যানসার সংক্রান্ত বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো ডেটা বা পরিসংখ্যান নেই। পপুলেশন বেইজড ক্যানসার রেজিস্ট্রি বিষয়ক কোনো স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডেটা আমাদের নিজস্ব নেই। যে কারণে আমরা বিদেশি ডেটা বা গ্লোবাল ডাটার উপর নির্ভর করি।
যেটা ২০১৮ সালে প্রকাশিত। গ্লোবাল ডাটার বিবেচনায় প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে আনন্দের বিষয়, গত কয়েক বছরের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ক্যানসারের মৃত্যুর হার ক্রমশই কমে আসছে। তবে বৈশ্বিক সাকসেস রেটের চেয়ে আমাদের দেশের সাকসেস রেট তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
এর কারণ হিসেবে কি আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নতি অবনতির হার বৈশ্বিক হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না এমন? এসব যথেষ্ট গবেষণার বিষয়। তবে সময় আর টেকনোলজির সঙ্গে ক্যানসারে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে এসেছে।
ডাক্তার সুমন বলেন, আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সব থেকে বেশি যে ক্যানসারগুলো ধরা পড়ছে সেগুলো হলো- ফুসফুসের ক্যানসার, স্তনক্যানসার, গলার ক্যানসার ইত্যাদি।
আমাদের দেশের ক্যানসার চিকিৎসার প্রতি সাধারণের সন্দেহ থাকার একটা মূল ব্যাপার হচ্ছে গাইডলাইন এর অভাব। অর্থাৎ আমাদের দেশে একজন ক্যানসার রোগী সার্জনের শরণাপন্ন হলে অনেক সার্জনই প্রথমেই সার্জারি করতে বলেন। আবার একই রোগী দ্বিতীয় দফায় যখন কেমো থেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন সেই চিকিৎসক হয়তো কেমো দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হন। যে কারণে রোগী সহজেই দোটানায় পড়ে যান।
অথচ বহির্বিশ্বে একজন রোগীর চিকিৎসায় সম্মিলিতভাবে একটি বোর্ড বসে, যেখানে প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ, সার্জন, ক্যানসার স্পেশালিষ্ট, মেডিক্যাল অঙ্কলজিস্টসহ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রোগীর জন্য দিক নির্দেশনা নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের শুধুমাত্র মহাখালী ক্যানসার হসপিটালে টিউমার বোর্ড হয়।
ডাক্তার মোস্তফা আজিজ সুমন বলেন, আমাদের দেশে এমন বোর্ডের মাধ্যমে ক্যানসার রোগীরা যদি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা পেতেন তাহলে রোগীরা দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রাখতে পারতেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন