করোনা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে।
এদিকে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে লকডাউনের মধ্যেও জরুরি সেবাদানকারী পরিবহন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এবার শুরু থেকেই পোশাকশিল্প কারখানা খোলা রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার (১৪ থেকে ২১ এপ্রিল) মতো তৃতীয় দফার লকডাউনেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রথম দিনই চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পোশাক শ্রমিকরা। সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পরিবহন সুবিধা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে মালিকপক্ষের কোনোই উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সকাল থেকে অনেকে পায়ে হেঁটে, ভ্যানে চড়ে কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় কারখানায় কাজে যোগ দিতে দেখা গেছে। ভোগান্তির পাশাপাশি শ্রমিকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আর গাদাগাদি করে কর্মস্থলে যাওয়ায় তাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে।
শিল্প কারখানা খোলা রাখা হলেও সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু সরেজমিনের চিত্র ভিন্ন। গেল এক সপ্তাহের মতো আজও সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুরের মতো শিল্পাঞ্চলগুলোতে হাতে গোনা দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও পোশাক শ্রমিকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন সুবিধা পেতে দেখা যায়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক পরিবহনের কথা থাকলেও কোনও কারখানা মালিকই তা বাস্তবায়ন করেনি।
পোশাক শ্রমিকরা বলছেন, তারা পেটের দায়ে গার্মেন্টসে কাজ করেন। বেতনইবা কয় টাকা পান। তার উপর যদি বাড়তি ভাড়া ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কর্মস্থলে আসতে হয় সেটা তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। সংসার-পরিবার থাকায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার সাহসও তাদের অনেকেরই নেই। তাই বাধ্য হয়েই তাদের কাজে যেতে হচ্ছে।
শ্রমিকদের দাবি, পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির একটা বড় চালিকাশক্তি। তার কারখানায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু পরিবহন ব্যবস্থাই নয়, পরিবহনে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধিও নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গেল ২৯ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা ১৮ দফা জরুরি নির্দেশনার ১৪ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাসমূহ ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/অসুস্থ/বয়স ৫৫ ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ওই নির্দেশনা জারির একদিন পরই ৩০ মার্চ ৫০ ভাগ নয়, শতভাগ জনবল নিয়েই প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা জানায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
গত ৫ এপ্রিল থেকে সরকার সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করলেও পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়। অর্থনীতির চাঙ্গা রাখতে সঙ্গে অন্যান্য উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানাও চালু রাখা হয়।
৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনের লকডাউনে করোনা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা দেয় সরকার।
তখন পোশাকশিল্প মালিকরা লকডাউনে সব বন্ধ রাখলেও পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানান। তা না হলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ হারাবে বলেও জানান তারা। তাদের যুক্তি, কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের ছুটি দিলে তারা বাড়ি ফিরে যাবে। তাতে করে করোনার সংক্রমণ আরও বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে।
সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে লকডাউনে জরুরি সেবাদানকারী পরিবহন-প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যা তৃতীয় ধাপের লকডাউনেও অব্যাহত রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন