ইংরেজি প্রবাদ ‘টক অব দ্য টাউন’ অর্থাৎ বহুল আলোচিত বিষয় হিসেবে বর্তমানে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে লকডাউনে এক নারী চিকিৎসকের সাথে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বাকবিতণ্ডার ভিডিও। আর সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে আর নিরপেক্ষতায় বিভক্ত নেটিজেনরা।
রোববার (১৮ এপ্রিল) ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, লকডাউনের মাঝেই প্রাইভেটকার নিয়ে বের হওয়া এক নারী যাত্রীর কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাইছেন লকডাউন বিধিমালা বাস্তবায়নে দায়িত্বরত প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস কাইয়ুম। আর শরীরে অ্যাপ্রোন পরিহিতা চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া ঐ নারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি বলে জানা যায়। এছাড়াও ঐ ঘটনায় বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া সাদা পোশাকের আরেক কর্মকর্তা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলে জানা গেলেও, তার পূর্ণ পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, পরিচয়পত্র দেখাতে না পারলেও পুলিশ এবং ঐ ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ডা. সাঈদা শওকত। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ‘হারামজাদা’ বলেও বকাঝকা শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করেন তিনি।
কম যাননি পুলিশ কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। চিকিৎসক গাড়িতে গিয়ে বসলেও সেখানেও উত্তেজিত অবস্থায় যান ওসি কাইয়ুম ও ঐ ম্যাজিস্ট্রেট। ওই চিকিৎসক নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিলে নিজেরাও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে ঐ নারী চিকিৎসককে জানান ঐ পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট।
এমন ঘটনায় ইন্টারনেট জুড়ে প্রশ্ন – সঠিক কে? কে-ই বা বাড়াবাড়ি করেছেন আর কেই বা সংযত হতে পারতেন? প্রশ্ন উঠেছে করোনায় চিকিৎসকদের ভূমিকা এবং পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব পালনের পরিশ্রম নিয়েও। মুক্তিযোদ্ধা বাবার পরিচয় দেওয়ায় ইন্টারনেটে আলোচনা চলছে কোটা পদ্ধতি নিয়েও।
পেশাগত পরিচয় সূত্র ধরে অনেকেই ইন্টারনেটে ঘটনাটি বিচার করছেন। পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সদস্যরা দেখছেন নারী চিকিৎসকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অসহযোগিতা। আর চিকিৎসা খাত সংশ্লিষ্টরা দিচ্ছেন প্রশাসনের দাম্ভিক দায়িত্ব পালনের দোষ।
২২ হাজারের বেশি ফেসবুক অনুসারী থাকা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা সালেহ ইমরান ঘটনাটির ভিডিওটি তার ব্যক্তিগত আইডিতে শেয়ার করেন। আর সেখানে লেখেন, উনি কত বড় ডাক্তার যে নিজের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকেই মানেন না। মন্ত্রলায়ের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে তিনি সেটা লংঘন করেছেন৷ তর্কে লিপ্ত হয়েছেন। দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারদের এক রকম হুমকি দিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে যদি মুভমেন্টে পাসও সাথে রাখতেন তিনি সেটাও রাখেননি৷ এই হলো একজন প্রথম শ্রেণির সম্মানিত নেটিজেনের আচরণ!
আরেকটি ভিন্ন পোস্টে একই পুলিশ সদস্য লেখেন, আইডি কার্ডটা ভুলে বা ইচ্ছাকৃত ফেলে এসেছিলেন, কিন্তু আচরণটাও কি সাথে ভুলে ফেলে রেখে এসেছিলেন?
সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে পরিচালক জসিম আহমেদ লেখেন, 'ডাক্তার- পুলিশের বাকবিতণ্ডার ভিডিওটি দেখলাম। অ্যাপ্রোন পরা ভদ্র মহিলার কাছে পুলিশ মুভমেন্ট পাস এক দুইবার চাইলেও মুলত পরিচয়পত্র দেখতে চাইছে। ভুল করে পরিচয়পত্র ফেলে আসলে ভদ্র ভাষায় দুঃখ প্রকাশ না কইরা তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটসহ পুলিশ অফিসারদের সাথে অশালীন আচরণ করেছেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন ক্রমাগত। বিভিন্নজনের কাছে করা ফোনেও ছিলেন অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক। তিনি যে সত্যিই ডাক্তার এবং ডিউটিতে যাচ্ছেন তাতে কারো সন্দেহ হওয়ার সুযোগ নাই তার কথাবার্তায়। শুট (ভিডিও) শুরুর আগে পুলিশ তাকে কায়দা করে উত্তেজিত করছে কি না তা স্পষ্ট হইতো যদি একদম শুরু থেকে ভিডিওটি থাকতো। '
মাহবুবুর রহমান এমিল নামের এক চিকিৎসক তারই আরেকজন পরিচিতজনের পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, 'আশপাশ দিয়ে হাজারো মানুষ যাচ্ছে, কারো মুভমেন্ট পাস দেখা লাগছে না, আপার গায়ে অ্যাপ্রোন, গাড়িতে স্টিকার থাকার পরও উনার মুভমেন্ট পাসটাই দেখতে হবে, কারণ কি? সাদা অ্যাপ্রন দেখলেই গায়ে চুলকানি ধরে কেন? আপাকে ইচ্ছেমতো ইরিটেট করে, অপমান করে টেম্পার হারানোর পর ভিডিও করে ভাইরাল করা, অসদাচরণের মধ্যে পড়ে না?'
কেউ কেউ আবার বলছেন, উভয়পক্ষই নমনীয় আচরণ করলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। অন্তত এক পক্ষের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকা উচিত ছিল। ' একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক সাদ্দিফ অভি লেখেন, 'কেউ একজন কম্প্রোমাইজ করলেই বিষয়টা এতদূর গড়াইতো না। '
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন