করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সিলেট নগরীতে গাড়ির চাপ না থাকলেও রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা রাস্তায় বেড়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করা হলেও ক্ষোভ আর হতাশা নিম্নআয়ের মানুষের। রিকশাচালক কালাই মিয়া পুলিশের বাধার মুখে পড়েন এবং চাকার বাতাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ তিনি।
তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ দূরের কথা রিকশা না চালালে এক দিনও আমার ঘরে চুলা জ্বলবে না। এমনিতেই যাত্রী নেই। এর মাঝে পুলিশ চাকার বাতাস ছেড়ে দিয়েছে।’
এদিকে প্রথম দিনে কড়াকড়ি থাকলেও দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টে খুব একটা কড়াকড়ি দেখা যায়নি। তবে কোথাও কোথাও গাড়ি থামিয়ে ‘মুভমেন্ট পাস’ আছে কিনা চেক করতে দেখা গেছে পুলিশকে। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে চলছে দ্বিতীয় দিনের লকডাউন।
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও ইফতারি পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ী। বিভিন্ন রকমের ইফতারি কিনতে দোকানগুলোয় ভিড় করেন ক্রেতারা। আর দুপুর পর্যন্ত রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা থাকলেও বেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জনসমাগমও। তবে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জরুরি সেবা চালু থাকলেও ব্যস্ততম এই নগরীতে মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম ছিল।
সরেজমিন নগরীর রোজভিউ পয়েন্ট, সোবহানীঘাট, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা পয়েন্ট, তালতলা ও রিকাবিবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র চৌহাট্টা পয়েন্ট ও রোজভিউ পয়েন্টে কিছুটা কড়াকড়ি রয়েছে। তবে লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকসহ জরুরি যেসব অফিস খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা রাস্তায় নেমে অফিসে পৌঁছতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কর্মীদের অফিসে নিয়ে যেতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হলেও বাস্তবে দেখা গেছে অফিসে পৌঁছানোর উপায় কর্মীদেরই খুঁজে বের করতে হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের আগপর্যন্ত নগরী ছিল অনেকটা জনশূন্য। এ সময় প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচলও একেবারেই কম ছিল। পুলিশকেও বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করতে এবং রাস্তায় বের হওয়া মানুষ ও যানবাহনের গতিরোধ করে চেক করতে দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
একই সঙ্গে বাড়ে রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যা। দুপুরের পর যারাই বের হয়েছিলেন তারা বেশিরভাগ ইফতার সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই বের হয়েছেন।
নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় বাজার করতে আসা লিটন মিয় বলেন, ইফতারের জন্য কিছু ফল কিনতে এসেছি।
দুপুর আড়াইটার দিকে বন্দর বাজার, সোবহানীঘাট, জিন্দাবাজার ও উপশহর পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি নেই। বন্দর এলাকায় ফুটপাতে ফলমূল নিয়ে বসেছেন হকাররা। কয়েকজন হকার জানান, বেলা দুইটার আগে পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা এখানে বসতে পারেননি।
এদিকে, দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না অফিসগামীরা। রিকশা চললেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া রিকশাওয়ালারা ভাড়াও হাঁকছেন অনেক বেশি। রাস্তায় গাড়ির চাপ না থাকায় বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা। তবে রিকশা ও হেঁটে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি অনেকে।
পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে আম্বরখানা, চৌহাট্টা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, কদমতলিসহ সকল মোড়ে। আর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে চলছে টহল। কোথাও সড়কেই আচমকা থামানো হচ্ছে গাড়ি। জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে বের হওয়ার কারণ।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট আবু বকর শাওন বলেন, নগরীতে গাড়ির চাপ না থাকলেও রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা রাস্তায় বেড়েছে। রাস্তায় যারা বের হয়েছেন বেশির ভাগেরই পাস রয়েছে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া আমরা কাউকে যেতে দিচ্ছি না। তবে জরুরি চিকিৎসাসেবা কাজে নিয়োজিতদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার মুভমেন্ট পাস নিয়ে অনেকেই জরুরি কাজের চাইতে ব্যক্তিগত কাজে বেশি বের হতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মামলা দিয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। যারা বিনা কারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন, মুভমেন্ট পাস না নিয়ে বাইরে বের হবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। জরিমানার পাশাপাশি জনগণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না আসার জন্য এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধও করছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, জরিমানা করা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়। পুলিশের উদ্দেশ্য করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সরকারের সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন মানতে সচেতনতা তৈরি করা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন