বৃষ্টি’র অপেক্ষায় হালদা নদীর পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। এখনো বৃষ্টি না পড়লেও নদীতে মা-মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন নদী’র পাড়ের বসবাসরতরা । ডিম সংগ্রহকারী বেশি ভাগ মানুষ দরিদ্র,এবার নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করতে আর্থিক সমস্যা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত টহলের কারনে হালদা অনেকটা পরিবেশমুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রি হালদা নদী পরিদর্শনকালে ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ঝড়-বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল দেখা দিলে মা-মাছ যে কোনো সময় ডিম ছাড়বে। এখন নদীতে প্রচুর মা-মাছ আনাগোনা দেখা যাচ্ছে বলে জানান তারা।
একাধিক ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়,নদীতে প্রচুর মা-মাছ এসেছে মাছের খেলা চলছে নদীতে বড় বড় রুই কাতলা মাছ চোখে দেখা যাচ্ছে।এবার তিন শতাধিক নৌকা প্রস্তুতী চলছে বলে জানান ডিম সংগ্রহকারীরা। সবাই অপেক্ষা করছে ডিম সংগ্রহের জন্য প্রতি বছর বজ্রপাতসহ মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণের সময় হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। মূলত এপ্রিলের শেষ বা মে মাসে বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামলে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালাবাউশ জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে হালদায়।
এ কারণে আগের তুলনায় বেশি ডিম এ রেণু পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেননদী পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী এবং বিশেষজ্ঞরা।হাটহাজারী অংশে নদীর আজিমের ঘোনা, অংকুরি ঘোনা, রাম দাশ মুন্সীর ঘাট, সত্তারঘাট, মাছুয়া ঘোনা,মাদার্শা, কাগতিয়া, গড়দুয়ারাসহ বিভিন্ন অংশ থেকে ডিম সংগ্রহ করবেন।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানায়,পরিবেশ অনেকটা সুন্দর যদি বৃষ্টি হয় পাহাড়ী ঢল নামে তবে ডিম ছাড়বে মা-মাছ। তিনি প্রশাসনিক ভাবে ডিম সংগ্রহকারীদের সুবিধার্থে সব রকমের সহযোগিতা করে যাবেন বলে জানান। এবার হালদা নদীর আটটি পয়েন্টে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা
বা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নদীটির নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা পুলিশের একটি ইউনিট এই ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে নজরদারি চালাবে।
যাতে অবৈধ জাল পেতে মা মাছ ধরা, ইঞ্জিন চালিত নৌকার চলাচল বন্ধ, বালু উত্তোলন বা ডলফিন রক্ষায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এসব সিসি ক্যামেরা ব্যবহৃত হবে।হালদা নদী বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, যাকেবঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সরকার। এপ্রিল মাসেই এখানে মাছের প্রজনন মৌসুম রয়েছে।তার আগেই হালদা নদীর প্রাকৃতিক প্রজননবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারির এই সিদ্ধান্ত নেয়া
হলো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মনজুরুল কিবরিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, হালদা নদীর জৈববৈচিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হালদা নদীর মা মাছ পাহারা বা সুরক্ষায় কাজ করছে। কিন্তু এত বড় একটি নদীকে এত কম মানুষ দিয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব না। এ জন্য আমরা অনেকদিন ধরেই সিসি ক্যামেরা বসানোরকথা বলে আসছিলাম। নদীতে ক্যামেরা গুলো বসানোর ফলে অনেকটা সুবিধা হয়েছে।
নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ক্যামেরা গুলো কভারেজ করা যাচ্ছে।নদীর পরিবেশ নষ্টকারীরা এখন ক্যামেরা ধরা পড়ছে। নদীর যে কোনো জায়গায় জাল অথবা বালু উত্তোলন করলে ওই ক্যারোয় সনাক্ত করা যাবে। ক্যামেরা গুলোবসানোর ফলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সহজ হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন