‘তিস্তা নদীর অববাহিকা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই দুই দেশকেই এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। এ নদীর পানি বণ্টন সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতকে বার্ষিক হাইড্রোলজিক্যাল মূল্যায়নে বসতে হবে। ’ এ বক্তব্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ এনভায়রেনমেন্ট রিসার্চ এর পরামর্শক ড. আইনুন নিশাত।
তিনি আরো বলেন, যে ভারত একতরফা ভাবে তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করছে যা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং কোনো আন্তর্জাতিক আইনে এমনকি ভারতীয় আইনেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তঃসীমান্ত পানির ব্যবহার বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় পানির ব্যবহার সম্পর্কিত ১৯৫৮ সালের আইনও এই ধরণের পানির প্রত্যাহারকে সমর্থন করে না।
আজ বৃহস্পতিবার একশনএইড বাংলাদেশ-এর আয়োজনে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘তিস্তা নদী অববাহিকা: সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ‘৭ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ২০২২’ এ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত এ সম্মেলন চলবে।
সম্মেলনের প্রথম দিন বিষয়ভিত্তিক প্রসঙ্গ- ইতিহাস, আকৃতি এবং তিস্তা ও এর পার্শ্ববর্তী নদীর স্থানিক পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে আলোচনা চলে। এবারের সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো তিস্তা নদীর রূপতত্ত্ব, নৃাত্ত্বিক বিষয় এবং আঞ্চলিক বিরোধের ওপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা; যাতে করে এই সমস্যাটির একটি সমাধান হয়।
তিনদিনের এই সম্মেলনটি সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ, এনজিও, দাতা সংস্থা, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, এবং তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে তিস্তা নিয়ে একত্রিত হয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘তিস্তা কৃষি, মৎস্য এবং খাদ্য ব্যবস্থার জন্য পানির একটি প্রধান উৎস। পানি ও নদী শাসন, আঞ্চলিক বিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন ধারাবাহিকভাবে জনগণের অধিকারকে প্রভাবিত করছে। তাই টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের মাধ্যমে নদীকে রক্ষা করা জরুরি। ’
উদ্বোধনী বক্তব্যে একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপার্সন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ওবিই বলেন, 'তিস্তা নদীর পানি বণ্টন একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়। পানি কারো নিজস্ব সম্পত্তি নয়। পানির ব্যবস্থা মানবাধিকারের মৌলিক বিষয়। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। '
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, 'উত্তরবঙ্গে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন চলছে। এমনকি ভারতীয় জনগণও বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে পানির দুর্ভোগে পড়ছে। পানি ব্যবস্থপনায় রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। '
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারতের স্থনীয় জনগণের মতে তিস্তার উপর বাঁধ নির্মাণের ফলে জীববৈচিত্র এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ভূমিতে আদিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
সম্মেলনে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অশোক সোয়াইন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে একসঙ্গে বসতে শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছা ও মানসিকতার অভাব রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন