প্রশ্ন একটাই, আপনি নিরাপদ তো?
06 March 2018, Tuesday
জাফর ইকবাল আক্রান্ত হওয়ার পর দেশ-বিদেশের বাংলাদেশিদের ভেতর যে প্রতিক্রিয়া তার আলোকে কয়েকটা কথা বলা জরুরি। তিনি একজন জনপ্রিয় লেখক। তার আদর্শবোধ আর নন-কম্প্রোমাইজিং আপোসহীন মনোভাবই যে এই আক্রমণের কারণ সেটা বলার দরকার পড়ে না। এবার তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই ঘটনা আকস্মিক হলেও অপরিকল্পিত না। তাছাড়া এটি অপ্রত্যাশিতও ছিল না। তা না হলে তার সাথে পুলিশ থাকবে কেন? কিন্তু সেই দুই-তিনজন পুলিশ তখন মোবাইলে ব্যস্ত। সেটা যতটা দোষের তার চেয়ে বড় কথা তার ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা খুনি ঠেকাবে কে? সে সমাজ কি এখন আছে? না সেই মানসিকতা আছে মানুষের?
বলছিলাম প্রতিক্রিয়ার কথা। এইযে শয়ে শয়ে তরুণ-তরুণী সমানে লিখে যাচ্ছে তাকে মারাটা জায়েজ বলছে এদের ঠেকাবে কে? যারা বলছে, তিনি অধার্মিক বা নাস্তিক তার ব্যাখা কি? কে না জানে তিনি ঘোষিত নাস্তিক কেউ নন। বরং আমি ছবিতে দেখেছি তিনি আচরণ মেনে চলা একজন মানুষ। ধর্ম নিয়ে কখনো কোনো বাজে বা উস্কানিমূলক কথাও লেখেননি তিনি। তবে তার অপরাধ? একটাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জন্য সব করতে পারেন। এ বিষয়ে আপোসহীন ক্রমে আওয়ামী রাজনীতিতে মিলে যাওয়া এই মুক্তপ্রাণ মানুষটি মূলত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য ঐতিহাসিক মার্চে আক্রান্ত হলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার এই দলের মানে আওয়ামী লীগের নেতারা কিন্তু কখনো আক্রান্ত হন না। মৌলবাদী বা জঙ্গি নামে পরিচিতেরা তাদের বিপজ্জনক মনে করে না। মনে করে দূর্নীতিমুক্ত সহজ সাধারণ লেখক শিল্পী কিংবা মানবতাবাদী নিরীহ মানুষদের। এটাই ভয়ের। এই পর্যন্ত আমরা যে দেখছি তাতে নারকীয় উল্লাসের শিকার হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায় কিংবা দীপনের কেউই রাজনীতি করতেন না। বরং তারা সব অপরাজনীতি ও নোংরামীর বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার।
বলছিলাম সেইসব বিকৃত মানুষদের কথা যারা এই অল্প বয়সে মগজ ধোলাইয়ের শিকার। কতটা নির্মম ও বেপরোয়া হলে একটি তরুণ একজন মানুষকে পেছন থেকে এভাবে মারতে পারে। আর কতটা নিদর্য় ও অসভ্য হলে বাকিরা এমনভাবে হত্যা সমর্থন করতে পারে। সহনশীলতার নামে মন্ত্রীরা যা বলছেন তাতে সমস্যা সমাধানের কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং আছে দুর্ভাবনা। একজন বলছেন, এসব সামাজিক মিডিয়া ঠেকানোর দায় আরেকজনের। এভাবে চললে একদিন সামাজিক মিডিয়াই তৈরি করবে নতুন নতুন ঘাতক। মূলত রাজনীতি এমন এক জায়গায় চলে এসেছে যেখানে কেউ কাউকে বাঁচানো দূরে থাক সাহায্য করতেও অনাগ্রহী! শেখ হাসিনা আছেন বলে তার জিরো টলারেন্স আর বোধোদয়ে জাফর ইকবাল স্যার ঢাকায় এসে বাঁচতে পেরেছেন। কিন্তু তারপর?
এ ঘটনার পেছনে আসলে কারা সেটা কিভাবে বের হবে? তার আগেই মতামত বিভক্ত আর সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে এমন সব গুজবে দেশ সয়লাব যে কোনটা আসল কোনটা নকল সেটাই বোঝা মুশকিল। তবু বিরক্তির সাথে বলি, এভাবে চললে একদিন দেশ উজাড় হোক আর না হোক প্রগতি মুক্তবুদ্ধি এসব উজাড় হয়ে যাবে। সেদিন কথা বলার লোক ও খুঁজে পাবেন না। থাকবে সেইসব ছদ্মবেশী রাজাকারেরা যারা প্রগতির আচকান চাপিয়ে এদেশকে আবারও পাকি কায়দায় শাসনে মানুষকে রাতদিন পটাচ্ছে। উস্কাচ্ছে। জাফর ইকবালের মহা দোষ তিনি এদের দলে ছিলেন না। মাঝখানে কিছুদিন মধ্যপন্থী হলেও চলে এসেছিলন মুক্ত শিবিরে। জাফর ইকবালের ওপর এই আক্রমণের ভেতর দেশ-বিদেশে একটাই প্রশ্ন জেগে আছে, এরপর? আর কোন মানুষের ঘাড়ে নেমে আসবে সেই ঘাতকের অস্ত্র? এর কি আসলেই শেষ নেই?আস
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন