২০১৮-২০১৯ সালে প্রথমার্ধের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালের শেষের দিকে অথবা ২০১৯-এর প্রথম দিকেই বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ এশিয়াভুক্ত রাষ্ট্রপতিশাসিত দেশ মালদ্বীপে নির্বাচন শেষ হয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি ক্ষুদ্র কিন্তু ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ নবীন গণতান্ত্রিক দেশ ভুটানের নির্বাচন সম্পন্ন হবে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানে নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং ওই দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই রাজনীতিতে একেবারে নতুন বলা যায় এমন একটি দল ক্ষমতায় এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক ভূরাজনীতিতে গুরুত্ব রাখে এমন একটি দেশ নেপালে ২০১৭ সালের শেষ মাসে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো এশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক অঙ্গনের দুটি শক্তি চীন ও ভারতের কথিত প্রভাববলয়ের মধ্যে থাকা এই কয়েকটি দেশের নির্বাচন এবং ফলাফল নিয়ে অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বা হয়েছে। এসব নির্বাচনের সঙ্গে এবং ফলাফলে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন বা ফলাফলের ওপর ভূরাজনৈতিক প্রভাববলয়ের বিষয় রয়েছে। এসব ছোট ছোট দেশ, বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী অথবা ভারতের কথিত ভূরাজনৈতিক প্রভাববলয়ে রয়েছে বা বিস্তারের মধ্যে দেশগুলোর নির্বাচন এবং ফলাফল নিয়ে ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কৌতূহল প্রণিধানযোগ্য। এর অপরপ্রান্তে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে প্রভাব বিস্তাররত চীনের প্রভাবের বিস্তারের দৃশ্যমান প্রচেষ্টা এবং সার্থকতার বিষয়টিও অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। চীনের অর্থনৈতিক এবং উদীয়মান সামরিক শক্তির সম্ভাবনা এবং পশ্চিমা শক্তির প্রভাববলয়ের ক্রমাগত সঙ্কোচন এখন ভূরাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম আলোচনা ও বিশ্লেষণের বিষয়। চীনের অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমে প্রভাববলয় সৃষ্টি অন্যতম লক্ষণীয় বিষয়।
by TaboolaSponsored LinksYou May Like
You can play this Game in your browser for free
Panzer Rush
Choose a plane and play this Game for 1 Minute
Delta Wars
এরই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের পশ্চিমার্ধের দ্বীপপুঞ্জের দেশ মালদ্বীপের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন এবং ভারত মহাসাগরের উদীয়মান শক্তি ভারত ও চীনের ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনে বিশ্লেষিত হচ্ছে।
মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ শ্রীলংকার পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম প্রান্তের দক্ষিণে এমন জায়গায় অবস্থিত যার ভূরাজনৈতিক অবস্থান আগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তেমনটা আগে পরিলক্ষিত হয়নি। ভূরাজনীতির অঙ্কে বিশেষ করে চীন-ভারতের প্রভাববলয়ের বিস্তারের আঙ্গিকে মালদ্বীপ বর্তমানে এক বিশেষ অবস্থানে রয়েছে। বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং কথিত শীতল যুদ্ধের অবসানের পর ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ও সামরিক বিপর্যয়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ইত্যাদির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-মহাসাগর নীতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষণীয়। যে কারণে মালদ্বীপের দক্ষিণে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। দিয়েগো গার্সিয়া এতদঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। তৈরি হয়েছিল একটি শূন্যতা, যার প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান পদচারণা এবং ভারতের সামরিক শক্তির উত্থান ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের পথে চীনের আগমন এ অঞ্চলের দেশগুলোর অভ্যন্তরের রাজনীতিতেও যথেষ্ট প্রভাব পড়ছে।
লক্ষণীয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশÑ আফগানিস্তানসহ যার সঙ্গে চীনের অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও ভুটান। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত না থাকলেও কাছাকাছি একটি দেশ। শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ভারত মহাসাগর দ্বারা বিচ্ছিন্ন তবে চীনের ক্রমবিস্তারিত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের বলয়ের মধ্যে। দক্ষিণ এশিয়ার সংজ্ঞায় না থাকলেও এ অঞ্চল সংলগ্ন বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের আওতায় যুক্ত করা হয়েছে।
ওপরে আলোচিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মালদ্বীপের নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি
মোহামন ইয়ামেন গাইয়ুমের ক্ষমতা হারানো এবং তার প্রতিপক্ষ এবং ২০০৮ সালের সংবিধান পরিবর্তনের পর প্রায় তিরিশ বছর ক্ষমতায় থাকা মামুন গাইয়ুমের প্রতিপক্ষ, নাশিদ সমর্থিত প্রার্থীর বিজয় এ অঞ্চলের সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।
ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক প্রাগৈতিহাসিক বলা যায়, কারণ মালদ্বীপের অধিবাসীরা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্রাবির সম্প্রদায়ের। পরে আরব মুসলমানদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম ধর্মের প্রচার এবং প্রসার হয়। তা ছাড়া ভৌগোলিক বিন্যাসে উত্তরে অবস্থিত ভারতের লবসাদ্বীপের ভৌগোলিক বিন্যাসের মতোই দক্ষিণের প্রায় ১৮৫ দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্র। মালদ্বীপের বর্তমান আয়তন মাত্র ২৯৪ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৪,২৭,৭৫৬ (২০১৬)। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ বলা যায় যার বার্ষিক জনপ্রতি আয় ১৩,১৯৬ মার্কিন ডলার।
মালদ্বীপের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ে যখন ব্রিটেন হর্ন অব আফ্রিকা এবং এডেন অঞ্চল হতে সরে যায় এবং দিয়েগো গার্সিয়া ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ঘাঁটি গাড়তে সম্মতি দেয়। পরবর্তীকালে হর্ন অব আফ্রিকায় এবং ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোতে সোভিয়েত শক্তি বাড়তে থাকে।
মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সামরিক ও ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ে যখন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ভারত মহাসাগরকেন্দ্রিক রাজীব ডকট্রিন তৈরি হয়। এরই সম্প্রসারণের এবং প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ও উপস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি হয় ১৯৮৮ সালের শেষের দিকে মামুন আবদুল গাইয়ুমের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটে যার মূলে ছিলেন আবদুল্লাহ লুতুফি এবং তাকে সাহায্য করতে শ্রীলংকার তামিল বিদ্রোহীদের একদল ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে মালদ্বীপের রাজধানী মালে দখল করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম অন্যত্র গা ঢাকা দেন। এই বিদ্রোহ দমনে গাইয়ুম যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতের সাহায্যের আবেদন করলে ভারত নভেম্বর ৩, ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো বিমানবাহিনী এবং কমান্ডো প্রেরণ করে। অপারেশন ক্যাক্টাস নামের এই অভিযান কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্রোহ দমন, মালে পুনর্দখল এবং হুলাহুলের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনরুদ্ধার করে মামুন আবদুল গাইয়ুমকে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এটাই ছিল রাজীব ডকট্রিনের প্রথম পরীক্ষা। অবশ্য এ সফলতার জন্য বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘ ভারতের যথেষ্ট প্রশংসা করে। সেই থেকে কম হলেও ভারতের সামরিক উপস্থিতি এবং গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের এ সম্পর্কের ভাটা পড়ে নাশিদের সময় থেকে যদিও নাশিদ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা বজায় রেখেছিলেন কিন্তু ক্রমেই মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়তে থাকে। অপরদিকে ভারতের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান জিএমআর (এগজ)-এর সঙ্গে হুলাহুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ এবং সংস্কারের যে চুক্তি হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ওই প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে সরে আসতে মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। সময়টি ছিল ওয়াহিদের শাসন আমলে (২০১২-২০১৩), যখন নাশিদ পদত্যাগ করেন। মোহাম্মদ ওয়াহিদ মালিক ছিলেন নাশিদের উপরাষ্ট্রপতি (হিন্দুস্তান টাইমস মার্চ ৬, ২০১৮ আগস্ট)। এর পর নির্বাচনে আবদুল্লাহ ইয়ামেনের বিজয়ের পর পরই নাশিদের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত।
হিন্দুস্তান টাইমসের উপরোল্লিখিত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ভারতীয় কোম্পানি জিএমআরের সঙ্গে ওয়াহিদের সময় ৫১০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিলের পর পরই চীনের প্রবেশ ঘটে। পরের নির্বাচনে আবদুল্লাহ ইয়ামেনের বিজয়ের পর পরই সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী সিমেন পিংয়ের সফরের পর থেকেই মালদ্বীপে চীনের প্রভাব শুরু হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই মালদ্বীপে চীনের লগ্নি দাঁড়ায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে বেশ কিছু বড় বড় অবকাঠামোর উন্নয়ন রয়েছে। ইতোমধ্যেই হুলাহুল দ্বীপে যেখানে মালদ্বীপের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তার সঙ্গে মালের সরাসরি যোগাযোগের জন্য সমুদ্রপথে ১.৪ কিলোমিটার সিনমালে সেতু অথবা চীন-মালদ্বীপ ফ্রেন্ডশিপ সেতু তৈরি হয়েছে যার উদ্বোধন ২০১৮ মাঝামাঝি হয়েছে। একই সঙ্গে চীনের সহায়তায় বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন সম্পূর্ণ হয়েছে। শুধু গত বছরই প্রায় ৩০,০০০ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণে এসেছিল এবং পর্যটক আগমন অব্যাহত রয়েছে।
চীনের সঙ্গে সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছে যখন মালদ্বীপ প্রথম ভারত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের সদস্য হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়। ইয়ামেনের সময়েই ভারতের জায়গায় চীনের নৌজাহাজের আনাগোনা ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ করা হয়। দুদেশের মধ্যে মালদ্বীপের পশ্চিম প্রান্তের দ্বীপ মাকুনদোহোতে জয়েন্ট ওসেন অবজারভেশন স্টেশন তৈরি এবং কার্যক্রম শুরু হয়। এক কথায় চীনের অর্থলগ্নি এবং মালদ্বীপের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের সুযোগ যেভাবে গ্রহণ করে ওই অঞ্চলে চীনের সরব উপস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে উদ্বিগ্ন রয়েছে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অপরদিকে ভারত।
ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়েছে দক্ষিণ শ্রীলংকার হাম্মানটোটা বন্দর ২০১৭ সালে ৯৯ বছরের লিজে চীনকে পরিচালনার দায়িত্বে হস্তান্তর করা হয়। এই বন্দরের নির্মাণ খরচ বাবদ শ্রীলংকার ঋণ শোধ করতেই ১.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে এই লিজ দেয়া হয়েছে। শ্রীলংকা ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছিল চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংক থেকে। বন্দর ছাড়াও শ্রীলংকা অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয়বাবদ চীনের কাছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণী। বর্তমানের শ্রীলংকার শাসক দল ভারতের অনুকূল বলে আখ্যায়িত হলেও চীনের অর্থলগ্নির কারণে চীনকে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের আরেকটি স্টেশন দিতে বাধ্য হয়েছে। চীন শ্রীলংকার অভ্যন্তরে রেলওয়ে এবং মহাসড়কের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
চীন শুধু এই দুদেশেই নয়, ভারত মহাসাগরের সংযোগ বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমারের দক্ষিণ রাখাইনে মাত্র কয়েক মাস আগেই কায়কাপু দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রামরি দ্বীপে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ এগিয়ে নিতে এমওইউ সম্পন্ন করেছে। মোট ৭.২ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের প্রথম পর্বেই খরচ হয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার দরকষাকষি করে ৭০:৩০-এ বন্দর পরিচালনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মিয়ানমারের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় ৩০ ভাগের অর্থ জোগান দেওয়াও কষ্টকর বলে মিয়ানমার সরকার বিপাকে রয়েছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারকে বন্দর প্রকল্পের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জোগান দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ অর্থও মিয়ানমারকে চীনই জোগাবে। মিয়ানমারের সঙ্গে এ বন্দরের মাধ্যমে এ অঞ্চলে চীনের ওয়ান রোড সমাপ্ত হবে। এখান থেকে মিয়ানমারের মান্দালয় হয়ে ইউনান পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর তৈরির প্রস্তাব মিয়ানমার সরকার সমর্থন করে এমওইউ শেষ করেছে। স্মরণযোগ্য যে, চীনের এ প্রকল্প অঞ্চল উত্তর রাখাইন, যেখান থেকে রোহিঙ্গদের বিতাড়িত করা হয়েছে, প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। উত্তর রাখাইন দিয়ে ভারতের প্রস্তাবিত কালাদান প্রকল্প হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের ওই অঞ্চলের মেড দ্বীপে চীনের তেল ও টার্মিনাল এবং পাইপলাইন ও মোমে থেকে গ্যাস পাইপলাইন ইউনান অঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে।
চীনের এ উপস্থিতিকে ভারতের ভূরাজনীতিবিদরা চীন কর্তৃক ভারতকে বেষ্টনীর মধ্যে আনার জোরালো প্রচেষ্টা বলে মনে করে উদ্বিগ্ন। কাজেই এ অঞ্চলের বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই দুই দেশের প্রভাব থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্তত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্লেষকরাই তেমন মনে করছেন। কাজেই নাশিদ সমর্থিত পিডিপির প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর নির্বাচন এবং বিজয়ের পেছনে পশ্চিমের এবং ভারতের সমর্থন রয়েছে তা বিশ্লেষকদের কাছে পরিষ্কার। ইতোমধ্যেই ইয়ামিনের সমর্থক সংসদ সদস্যরা দেশের নাম উল্লেখ না করলে কোনো প্রতিবেশী দেশের সমর্থনে ভোটে কারচুপি হয়েছে আওয়াজ তোলা শুরু করেছে। অঙ্গুলি নির্দেশনা হচ্ছে, মালদ্বীপের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আহমেদ শরিফ এবং অন্যদের ওপর (মালদ্বীপ টাইমস ৪ অক্টোবর ২০১৮)। ভারতীয় পত্রিকা দি ডিপ্লোমেটে সুধা রামাচন্দ্রানের এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনের ফলাফল উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
যাহোক মালদ্বীপ যে এখন চীন এবং ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রভাবের টানাপড়েনে পড়তে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মালদ্বীপ চীনের অর্থঋণের বোঝা থেকে সহজে বের হতে পারবে কিনা এবং নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সলিহ ওরফে ইবু মালদ্বীপে কতখানি সার্থক হবেন তা দেখার বিষয়। তবে এ অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক ক্রমবর্ধমান প্রভাব অবশ্য ভারত মহাসাগরের বিদ্যমান জটিল পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করবে এবং এসব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর প্রভাব অবশ্যই বাড়তে থাকবে।
য় ড.এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও কলাম লেখক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন