এক-এগারো: বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮ মহিউদ্দিন আহমদ, প্রথমা প্রকাশন
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম প্রত্যয় ছিল গণতন্ত্র। নব্বইয়ে যে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, তারও উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। কিন্তু প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস, কাউকে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়া বা প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার মানসিকতার কারণে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সাংঘর্ষিক অবস্থান ও অচলাবস্থার অনেকটা অনিবার্য পরিণতি ছিল এক-এগারোর পটপরিবর্তন।
তবে ক্ষমতার রাজনীতি সব সময় সুবিধামতো ইতিহাস ব্যাখ্যা করে থাকে। সময়ের ব্যবধানে সেই ব্যাখ্যা বদলেও যায়। কিন্তু কেন ও কাদের কারণে এক-এগারোর উদ্ভব হলো, সে সম্পর্কে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ নেই। ২০০৭ সালের এক-এগারোর আগে ও পরে রাজনৈতিক দল, রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, সেসব নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহ আলোচনা দরকার।
বিজ্ঞাপন
এক-এগারো আসলে রাজনীতির রোগ নয়, রোগের উপসর্গমাত্র। রোগ হলো ক্ষমতায় থাকতে সবকিছু দখল করা এবং বিরোধী দলে থাকলে সবকিছু ওলট-পালট করে দেওয়ার মানসিকতা। গণতন্ত্রের মূল কথা হলো, যুক্তি-তর্ক ও আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিরোধী দলে থাকতে আমাদের রাজনীতিকেরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে বুলন্দ আওয়াজ তোলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো, তাঁরাও ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করেন। এখানে গণতন্ত্র আসে যাওয়ার জন্য, আর স্বৈরতন্ত্র যায় আসার জন্য।
সামরিক শাসক সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেননি বলে রাজনীতিকেরা আন্দোলন করে তাঁকে তাড়িয়েছেন। দলীয় সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি বলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দলীয় সরকারকেও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হলো। আর এ কারণেই এক-এগারোর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটি এমনই এক ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে, যার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া থাকবে আরও অনেক দিন।
এক-এগারোর আগে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে লিখলেও সামগ্রিক বিষয়টি তুলে ধরেছেন লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর এক-এগারো: বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮-এ। এ বইয়ে তিনি নিজের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন ওই সময়ের প্রধান চরিত্র, পার্শ্বচরিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা একে অপরের বক্তব্য খণ্ডন করেছেন। সফলতার কৃতিত্ব নেওয়ার পাশাপাশি ব্যর্থতার দায় চাপিয়েছেন অপরের প্রতি। লেখকের ভাষায়: ‘এই বইয়ে বিশেষ একটি সময়ের যে ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, তার বড় একটি অংশ সাক্ষাৎকারভিত্তিক তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। আমি চেয়েছি খোলামেলা আলোচনার মধ্য দিয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে।...দেখা গেছে, একই বিষয়ে একেকজন একেক রকম তথ্য দিয়েছেন বা মন্তব্য করেছেন। আবার কিছু কিছু বিষয়ে একমত পেয়েছি। এই ভিন্নতাটুকু সময়ের চরিত্রগুলো বুঝতে আমাদের সাহায্য করে।’ রাজনীতিকেরাও একই কাজ করেন।
বিজ্ঞাপন
মহিউদ্দিন আহমদের লেখায় তিনটি পর্ব উঠে এসেছে: এক-এগারোর পটভূমি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসন এবং পরবর্তী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। প্রথমেই স্বীকার করতে হবে যে বিষয়টি রাজনৈতিক এবং এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদের ভূমিকাই ছিল মুখ্য।
যেকোনো ঘটনার পটভূমি, শুরু ও শেষ থাকে, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক-এগারো এমন এক ঘটনা, যা সহজে শেষ হওয়ার নয়। যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে এক-এগারো ঘটানো হয়েছিল বলে এর উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, যা নিয়ে নাগরিক সমাজের মধ্যে আশাবাদ জেগেছিল, তার খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ চলেনি। রাজনীতি এক কদমও এগোয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছে আরও ভঙ্গুর, অকার্যকর।
বলা হয়ে থাকে, রাজনীতি ও শাসনকাঠামোর সংস্কারই ছিল এক-এগারোর পটপরিবর্তনের লক্ষ্য। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নসহ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এক-এগারোর আগে ক্ষমতায় ছিল ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যা নামে তত্ত্বাবধায়ক হলেও কার্যত বিএনপি সরকারের বর্ধিত সংস্করণ। ফলে বিএনপি জোটের বাইরের প্রায় সব দল ক্ষমতার এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল।
২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গভবনে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে চারদলীয় জোট ছাড়া সব দলের নেতা-নেত্রীরা সোৎসাহে যোগ দিয়েছিলেন। বিএনপিরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা বঙ্গভবনের পথে রওনা দিয়েছিলেন কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ফিরে এসেছেন। সেনা নেতৃত্বের কাছেও এক-এগারোর আগের পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল না। রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের আদেশ-নির্দেশ তাঁরা মানতে বাধ্য। আবার অন্যায় আদেশ মানলে জন-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিতে হয়। ১৯৯০ সালেও সেনা নেতৃত্বের জন্য এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
এক-এগারোর নেপথ্য শক্তি শুরুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে একটি বিকল্প শক্তিকেন্দ্র গড়ে তুলতে চেয়েছিল। সেই লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল, যা ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন পরিচালক চৌধুরী ফজলুল বারীর জবানিতে উঠে এসেছে। দু্ই দলের অনেক নেতাও সোৎসাহে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যদিও তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের দাবি, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল না। নির্বাচন করে তাঁরা ব্যারাকে ফিরে যাবেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই শীর্ষ নেত্রী যখন গ্রেপ্তার হলেন, তখন অন্য রাজনীতিকেরাও ভয় পেয়ে যান। দুই দলেই বিভক্তি দেখা দেয়। বিএনপির বিভক্তি ছিল স্পষ্ট, আওয়ামী লীগেরটা অস্পষ্ট।
কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা; বিশেষ করে সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চালের ঘাটতি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এক-এগারোর উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ এক-এগারোর পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল, তারাও অনির্বাচিত সরকারকে বেশি দিন মেনে নিতে চায়নি। তদুপরি এক-এগারোর দুই প্রধান কুশীলব মইন উ আহমেদ ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে একপর্যায়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে মইন উ আহমেদ ক্ষমতা ধরে রাখার চেয়ে প্রস্থানের মসৃণ উপায় খুঁজতে থাকেন। আর সেটি হলো সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ। তাঁর পরিষ্কার ঘোষণা ছিল, ‘২০০৮-এর নির্বাচন আমাদের জন্য গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির নতুন মাইলফলক।’
স্বীকার করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করেছিল। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। কিন্তু নির্বাচন ছাড়া তাদের রাজনৈতিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ওয়াদা করেও কথা রাখেননি।
বিজ্ঞাপন
মসৃণ প্রস্থানের বিষয়ে এক-এগারোর কুশীলবেরা যে উদ্বিগ্ন ছিলেন, সেটি বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও নেতাদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনায় স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে ভারত সফরকালে দেশটির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখার্জির সঙ্গে মইন ইউ আহমেদের বৈঠকের কথোপকথনটি স্মরণীয়। প্রণব মুখার্জি দুই নেত্রীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ দিলে মইন উ আহমেদ ক্ষমতা ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই নিশ্চয়তা চান। প্রণব মুখার্জির ভাষ্য অনুযায়ী, মইন নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন। (সূত্র: দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২: প্রণব মুখার্জি)
এক-এগারোর চরিত্র উদ্ঘাটন করতে গিয়ে এর অন্যতম কুশীলব মইন উ আহমেদের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন আহমদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সেই সময়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক চৌধুরী ফজলুল বারীরও। তাঁরা অনেক কথা চেপে গেছেন, নিজেদের দায় এড়িয়েছেন, অন্যদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। একই কাজ করেছেন সে সময়ের আলোচিত বহু রাজনীতিকও। সেনাসমর্থিত শাসন দীর্ঘস্থায়ী হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক নেতার অবস্থানই ভিন্ন হতো।
মহিউদ্দিন আহমদ আরও যাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও উপদেষ্টা মইনুল হোসেন, নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান সারওয়ার জাহান নিজাম, সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান ও নূরউদ্দিন খান, সাবেক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা এ টি এম জহিরুল আলম, রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল, মাহমুদুর রহমান মান্না, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান, শিক্ষকনেতা হারুন অর রশিদ ও সদরুল আমিন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ইফতেখারুজ্জামান, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আবুল হাসিব খান, সাবেক আইজিপি খোদা বকশ চৌধুরী, র্যাবের সাবেক ডিজি এস এম মিজানুর রহমান, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, চিকিৎসক কাজী মজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
লেখকের ভাষ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর সময়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ফখরুদ্দীন আহমদ সরকারের দৈনন্দিন কাজ ও নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে নিজেকে জড়াননি। তবে তাঁর কোনো কোনো উপদেষ্টা জড়িয়েছেন কিংবা দূরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চেয়েছিলেন, তার আভাস-ইঙ্গিতও মহিউদ্দিনের বইয়ে আছে।
রাজনৈতিক সংকট বা অচলাবস্থার সুযোগে এর আগেও বাংলাদেশে সেনা হস্তক্ষেপ হয়েছে; সে সময়ে তাদের সাফল্যের বড় কারণ ছিল জনপ্রিয় শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি। প্রথমবার ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়; দ্বিতীয়বার জিয়া হত্যার কয়েক মাস পর এরশাদ প্রায় বিনা বাধায় বিচারপতি সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেন।
এক-এগারোর পরিবর্তন সম্পর্কে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তাতে বলা যাবে না যে এর পেছনে দীর্ঘ ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল। তাঁরা দুই শীর্ষ নেত্রীকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু এরপর কী করবেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এক-এগারোর উদ্যোক্তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদের কথা বললেও তাঁদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে পক্ষপাত ছিল। তবে নির্বাচনের লাইনচ্যুত ট্রেনকে সঠিক লাইনেই তুলতে পেরেছিলেন। এই কৃতিত্ব তাঁদের দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিকেরা কথায় কথায় এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র খোঁজেন। বিস্ময়কর হলো, যে দল এক-এগারোর সুবিধা পেয়েছে আর যে দল মনে করে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে; তারা একই সুরে কথা বলছে। কিন্তু কেন এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলো, তার উত্তর খোঁজে না।
বিজ্ঞাপন
মহিউদ্দিন আহমদের বইয়ে ‘সেনা মনস্তত্ত্ব’ নামে একটি অধ্যায় আছে। এতে সেনাবাহিনীতে পদায়ন, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মামা-ভাগনের দ্বন্দ্বের কথা আছে। মহিউদ্দিন লিখেছেন, ‘সাঈদ এস্কান্দার ও তারেক রহমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। মামা-ভাগনের এই দ্বৈরথ ছিল বিএনপির উত্তরাধিকার নিয়ে।...একটা ব্যাপারে তাঁদের (সাঈদ ও তাঁর ভায়রা মাসুদ) ঐকমত্য ছিল—যেকোনো উপায়ে তারেকের উত্থান ঠেকাতে হবে। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তারেক সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। (সূত্র: সালিম সামাদ, কাউন্টার কারেন্ট)’
মহিউদ্দিন আহমদের বইয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিনিধিদের একাধিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর কোনো কোনো বৈঠক দেশের বাইরে হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তও আগে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
ইতিহাসের পরিহাস হলো, যাঁরা এক-এগারো থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা তো বটেই; যাঁরা লাভবান হয়েছেন, তাঁরাও এর বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু সে সময়ে কোনো কোনো দলের কোনো কোনো নেতা এক-এগারোর কুশীলবদের সঙ্গে বৈঠক ও সমঝোতা করেছেন, সেসব মহিউদ্দিন আহমদ নানাজনের ভাষ্যে ফাঁস করেছেন। ইতিহাসের অনুসন্ধিৎসু পাঠক এ বইয়ে এক-এগারোর অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। লেখককে অভিনন্দন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন