মাযহাব মানা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ ?

লিখেছেন লিখেছেন মারুফ পাটওয়ারী ০৭ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৩২:০৪ রাত

মাযহাব মানা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ ?

মাযহাব কি ? কেও যদি প্রশ্ন করে, বর্তমানে সোজা কথায় জবাব দুনিয়াতে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য কোন মত এবং পথ কে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে নির্ধারণ করে তাকে পরিপূর্ণ আদর্শ হিসেবে গ্রহন করা। যাহা মূলত ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় কোরআন এবং হাদিসের পরিপূর্ণ আমলের উপর।

বর্তমানে আমরা মাযহাব অনুসরনের কথা বলতে বুঝি চার ইমামের যে কোন একজনের অনুসরনের কথা। এদের যে কোন একজনকে না মানা পর্যন্ত আপনি পরিপূর্ণ মুসলিম হতে পারবেন না , এমন মনগড়া দলিল বিহীন ভাবনাই সমাজে প্রচলিত। যাই হোক মাযহাব মানা শিরক কি না খুব সহজ ভাষায় বলতে পারব না কারন এটা অনেক বড় একটি গবেষণার বিষয় , তারপরে ও স্বাভাবিক কিছু কোরআন হাদিসের গবেষণার আলোকে আলোচনা করার নুন্মতম সহস নিয়ে মাযহাবের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারলাম না। ফতওয়া শব্দটির মূল অর্থ জানতে পারলাম মতামত প্রকাশ করা। শাব্দিক অর্থে ফতওয়া দেওয়া আমি অথবা আমার মত কম জানা কোন মানুষের পক্ষে ঠিক না, আমি সেটি চেষ্টা ও করি না কখনো , আমার নিজের দ্বারা যেন নতুন কোন বিভ্রান্তির বা মত সৃষ্টি না হয় ইসলামের মধ্যে, এই ব্যাপারে ইনশাল্লাহ সর্বদা সচেতন থাকি, এবং প্রত্যেকের এই ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিৎ বলে মনে করি , কারন ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হলে অনেক জানা এবং আমলের প্রয়োজন হয়। তারপরেও আপেক্ষিক অর্থে যেহেতু মতামত প্রকাশ করা তাই , কোরআন হাদিসের কিছু এলেম অর্জনের চেষ্টা থেকেই ইসলামের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অদম্য সৎ শক্তি অর্জন করার দায়বদ্ধতার আভাব অনুভব করছি। যাই হোক একমাত্র আল্লাহ্‌ই মনের ভাব বুঝতে পারবে এটাই প্রত্যাশা। কোন দল মত এবং আদর্শকে ছোট করার নুন্মতম ইচ্ছাই মনের কোটরে জায়গা না দেওয়ার চেষ্টা এবং সত্যকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই আলহামদুলিল্লাহ।

তবে মাযহাব মানতেই হবে এমন কোন বিষয় কোরআন হাদিস দ্বারা স্বীকৃত নয়। কোরআন এ জ্ঞানী লোকদের কথা মানার কথা বলা হয়েছে এটা ঠিক আছে ,তবে এখানে দেখার বিষয় সাহাবাদের কথা, তাবেঈন ,তাবে তাবেঈনদের কথা যদি বলা হয় তবে ব্যাপারটি অবশ্যই ঠিক আছে তারা পরিক্ষিত আলেম, এইসব আলেমদের কথা আল্লাহ কোরআনেই বলেছেন। কিন্তু জ্ঞানী লোকের জায়গায় আমার কথা আর আপনার কথা যদি বলা হয় তাহলে বিষয়টি অবশ্যই যাচাই করতে হবে যে আমার কথার উৎস কোথায় ? কারন ইসলাম এমন এক জায়গা যেখানে আমি অথবা আপনি চাইলেই সেখানে কোন কিছু সংযজন বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখিনা । এর একমাত্র অধিকার রয়েছে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে , যাহা রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা এবং পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন আল্লাহ নিজেই মানব জাতির দিকনির্দেশনার জন্যে ।

অনেকে বলে চার মাযহাবের কোনটিই অশুদ্ধ নয় , এদের যে কোন একজন অথবা চার জনকেই মানা যাবে তারা তো ভুল কোন কিছু শিক্ষা আমাদের দিচ্ছে না ? আমি বলি কেন আপনি চার জনকেই মানবেন ইমাম হিসাবে বিশ্ববিখ্যাত ইমাম তো আর এই চার জনেই শুধু পৃথিবীতে এসেছেন এমন না, তাকওয়া সমৃদ্ধ ইমাম এই পৃথিবীতে আরও অনেক ইমাম এসেছেন...যাদের কথা এবং কাজের উৎস ছিল একমাত্র আল্লাহ এবং রাসুল। আমরা প্রত্যেকেরই ভাল উপদেশ গুলু মানি একজন পরিপূর্ণ রাসুলের অনুসারি হিসেবে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে যেই বিষয়ে আল্লাহ এবং রাসুলের সরাসরি বিধান জারি হয়েছে সেইখানে তো আর কারো কাছ থেকে কোন বিষয় জানা বা মতা মত নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারন কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ সরাসরি আপনাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন , সেখানে আপনার তো কারো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। উদহারন স্বরূপ ধরুন , [আপনি যদি একটি অফিসের বসকে ভাল ভাবে চিনেন এবং জানেন এবং আপনার সাথে খুব ভাল সম্পর্ক ও আছে ওনার সাথে , ওনাকে আপনার নিজের একটা জরুরি কাজে খুব প্রয়োজন। এবং উনি চাইলে কাজটি খুব সহজে করে ও দিতে পারবেন আপনাকে , আপনি চাইলে উনার কাছে খুব সহজে যেতে ও পারবেন , যাওয়া মাত্রই আপনার কাজটি উনি করে দিবে এমন নিশ্চয়তা ও আছে, এবং আপনি গেলে উনি খুব খুশি ও হবেন। এমন অবস্থায় আপনার কাজটি সমাধান করার জন্য আপনি উনার অফিসের পিওন অথবা অন্য কোন তৃতীয় পক্ষকে মাধ্যম হিসাবে ব্যাবহার করা কি বদ্ধিমান অথবা যক্তিক কাজ হবে ? না সরাসরি উনার সাথে আলোচনা করেই কাজটি সমাধান করবেন ? কোনটি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য ? নুন্মতম বুদ্ধিমান সম্পন্ন বেক্তি হলে তিনি সরাসরি বসের সাথে আলোচনা করে এক বারেই কাজটি সমাধান করে ফেলবেন। তিনি তৃতীয় কোন পক্ষ কারো জন্য অপেক্ষা করবেন না এবং করা উচিৎ ও হবে না ] যেহেতু সরাসরি সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনি নিজের আকুল আবেদন জানানোর ক্ষমতা তিনি আপনাকে দিয়েছেন, এবং আল্লাহর আইন সমূহ কোরআন হাদিসের শিক্ষার মাধ্যমে সহজেই জানতে পারতেছেন ,তাই আপনি সরাসরি তার কাছে কোন মাধ্যম ছাড়া চাইবেন এটাই প্রকৃত বদ্ধিমানের কাজ। তদ্রুপ মানব জাতি সর্বদা সৃষ্টিকর্তার একান্ত নিকটে যেতে পারেন যে কোন মুহূর্তে সিজদারত অবস্থায় । কিভাবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পাবেন তা মাহান সর্বশেষ সংশোধনী গাইডলাইনে পরিস্কারভাবে খুলে খুলে আলোচনা করা আছে। এখন দেখার বিষয় আপনি সৃষ্টিকর্তার কাছে সরাসরি কোন কিছু চাইবেন ? না তৃতীয় পক্ষ হিসাবে কাওকে ব্যাবহার করবেন...? এটি আপনার বোধগম্য বিষয়। কেও কেও বলে ইমাম গন হচ্ছে আমাদের শিক্ষক তারা আমাদের আল্লহর রাস্তায় সহজ রাস্তার সন্ধান করে দেয় যাতে আমরা সঠিক রাস্তার সন্ধান খুজে পাই, তারা ছাড়া আমরা কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা বুঝতে পারব না । আমি বলব না ইমামগনের অনুসরন প্রয়োজন নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের আদেশ নিষেদ কোরআন হাদিসের সাথে মিল থাকবে অবশ্যই তাদের মানা এবং অনুসরন করা যাবে। কিন্তু সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকার পরে ও কেন আপনি অন্যের সহযোগিতা নিবেন ? তাছারা পূর্বে কোরআন হাদিস বুঝার জন্য আমাদের কাছে বর্তমান আধুনিক বিশ্বের মত পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষায় সহজ অনুদিত কোরআন হাদিসের অনুবাদ , সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই সঠিকটি অনুসন্ধান করার মত এত সহজ মাধ্যম ছিলনা, সেটা অবশ্যই আপনাকে চিন্তা করতে হবে।

আমি যদি বলি যে আপনি চান ধর্মকে খুব ভাল ভাবে জানতে এবং মানতে আপনি চান একজন আলেম এবং দ্বীনদার বেক্তির অনুসরনের মাধ্যমে আপনি সঠিক পথ খুজে নিবেন , এই বিশ্বাস আপনাকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে না ও যেতে পারে , কারন তিনি একজন মানুষ তার ও ভুল হতে পারে অথবা এলেমের স্বল্পতা থাকতে পারে তিনি ভুলের বাহিরে নয়। যেহেতু আপনি যেই রাস্তার অনুসন্ধান করছেন সেটি একটি ঐশ্বরিক রাস্তা এবং এর গাইডলাইন ঐশী বানীতেই রয়েছে.. রাসুল ঐশী বানী প্রচারের দীক্ষা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকেই পেয়েছেন এবং ঐ ঐশী বক্তব্য ওনার ওপরেই নাজিল হয়েছে, তাই বিষয়টির সম্বন্ধে তিনি ভাল জানবেন এবং সেটি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার কেবল মাত্র তার ,এটাই স্বাভাবিক। রাসুল এবং কোরআন যেভাবে আপনাকে ইসলাম অনুসরনের নির্দেশনা দিয়েছেন,আপনাকে ঠিক সেভাবেই ইসলাম পালন করতে হবে, আল্লাহ কোরআনে বলেছেন হে মমিন গন তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসুল কে অনুসরন কর। তাহলেই কেবল কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা আপনি অর্জন করতে পারবেন ইনশাল্লাহ।

তাছাড়া, চার ইমামের প্রত্যেকেই বলেছেন তোমরা আমাদের কথা ততক্ষন পর্যন্ত গ্রহন করবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কথার উৎস থাকবে একমাত্র কোরআন এবং হাদিস। এর বাহিরে আমাদের কথার মধ্যে অন্য কোন উৎসের সন্ধান পেলে তোমরা তা ছুড়ে ফেলে দাও। তারা ও ইসলামকে কোরআন ও হাদিসের মধ্যেই অনুসন্ধান করেছেন। তাদের আশ্রয়স্থল ও ছিল কোরআন এবং হাদিস। যাহা বর্তমানে আপনার খুব সন্নিকটে বলতে গেলে হাতের মুঠোয় একেবারে ছোট একটি কম্পিউটার ডিভাইজে । নিজে গবেষণা করে অনুসন্ধান করুন , কোরআন হাদিসের এলেম অর্জন করুন । নিজেরটাই সঠিক পথ এটা মনে করা কারো জন্যে উচিৎ নয় , আমার ও ভুল হতে পারে ,তাই সার্বিক ভাবে বলতে চাই মাযহাব মানতেই হবে না মানলে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হবেন এমন ভাবনা ভাবার অবকাশ নেই ইসলামে।

আমাদের সমাজে অনেক মত ও পথ বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে সাধারন সঠিক পথ অনুসন্ধান কারীদের অবশ্যই মনে রাখতে রাসুলের সেই হাদিসটি কেয়ামতের আগে মুসলিম ৭৩ টি দলে বিভক্ত হবে তার মধ্যে ৭২ টি দল ১ টি বাদে সবাই নিশ্চিত বিভ্রান্তিতে থাকবে সাহাবারা তখন জিজ্ঞেস করলেন ১ টি দল জান্নাতে যাবে , সেটি কোনটি ? তিনি বললেন যারা কোরআন এবং আমার সুন্নাহকে শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে কেবল তারাই জান্নাতে যাবে। তাই আমাদের সর্বদা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে আকুল আবেদন করে হে আল্লাহ আমি তোমার গুনাহগার বন্দা আমার একমাত্র উদ্দেশ্য তোমার সন্তুষ্টি অর্জন করা তুমি আমাকে সরল এবং সোজা পথ দেখাও । আমীন।

বিষয়: রাজনীতি

১২৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File