সৃজনশীল আড্ডাটা আজ আর নেই; পরিবেশ তৈরি করতে হয়
লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:২১:১১ রাত
ওয়াহিদুজ্জামান :
আড্ডা বা খোশগল্প শব্দটি শুনলেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠে নানা সুখময় সব চিত্র । ব্যক্তি,স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এ আড্ডার ভিন্নতা রয়েছে । আছে স্ব - স্ব শৈল্পিক সৌন্দর্য -মাধুর্য । আর সে আড্ডাটি যদি হয় নির্মল সাহিত্য কেন্দ্রিক; তবে তো কথাই নেই !
বিখ্যাত হওয়াদের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এ রকম নির্মল আড্ডা থেকেই তারা বেরিয়ে এসেছেন । যে আড্ডায় কোন ক্লান্তি নেই, রূঢ়তা নেই, হিংসা - বিদ্বেষ -হীনমন্যতা নেই, রুক্ষতা , সংকীর্ণতা, পঙ্কিলতা, কু- ধারণা, পরনিন্দা, আত্মপূজা …………………… নেই ।
কারণ মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি ও কৃত্রিমতা দিয়ে আড্ডা হয় না । এ সবের বাহার আছে ; বাহাদুরি নেই, চাকচিক্য আছে ; সারমর্ম নেই, জৌলুস আছে ; শুভ ফল নেই ।
সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, " আমি মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোতে সৃষ্টি করেছি। তারপর আবার তাদের নামিয়ে দেই নীচুদের চাইতেও নীচে । তবে তাদের নয় যারা বিশ্বাস করে এবং যোগ্যতার সাথে শুদ্ধি ও সংশোধনের কাজ করে (৯৫: ৪- ৫)
সে দিনের ( শনিবার সন্ধ্যায় প্যারিসের এক কফি হাউজের ) আড্ডায় আমাদের বিশেষ করে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে (১) প্রকৃতির সৌন্দর্যে সবার অধিকার রয়েছে (২) শিশুরা ফুলের মত , বসন্তের মত প্রস্ফুটিত, সুভাষিত, সুসজ্জিত সুন্দর , প্রকৃতির মত নির্মল, নিষ্পাপ (৩) শিশুরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল (৪) নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতায় প্রকৃতি ও থেমে যায় ; প্রস্ফুটিত হতে চায়না (৫) প্রকৃতির মাঝে যে আনন্দ খেলা করে, তার ছোঁয়া ছুঁয়ে যায় মানুষের মন (৫) বিশ্বের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যেই সর্বোচ্চ প্রশান্তি পাওয়া , ধর্মীয়ভাবে যাকে বেহেশত, স্বর্গ , দেবলোক …………………… বলে (৬) এ রকম আড্ডা মানে নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতার প্রাচুর্য।
এ আড্ডার বিরাট অংশ জুড়ে ছিল ফাল্গুন তথা ঋতুরাজ বসন্ত । বসন্তের প্রকৃতির বর্ণনা, আবহমান গ্রাম বাংলার সহজ- সরল মানুষের পারিবারিক - সামাজিক বন্ধন । বসন্ত মানেই যেন কেবল ফুল আর ফুল। গাছে গাছে নতুন পাতা, আমের মুকুল, কোকিলের নিরলস কণ্ঠের কুহু কুহু গান, তীব্র শীতে ঝিমিয়ে পড়া প্রকৃতি যেন গা- ঝাড়া দিয়ে ওঠে বসন্তে । নতুন নতুন পল্লবে ফুলে ফলে সাজা প্রকৃতি, পাখির কলকাকলিতে মুখর আকাশ - বাতাস- প্রান্তর ! দখিনা হাওয়া, শুকনো ঝরা পাতায় নূপুরের নিক্বণ , বুনো ফুলের সুবাস , গাঁদা ফুল, শুভ্র কাশফুল , কদম ফুল, কুচুরি , শিমুল , বাতাবী নেবু ফুল,কৃষ্ণচূড়া , হাসনাহেনা, মাধবী , কুঁড়ি, গাছের নতুন কুঁড়ি- পাতা -শাখা , পলাশ, অশোক , চন্দ্রমল্লিকা, বকুলসহ নানান রঙের বাহারি ফুল, পাখ পাখালির মেলা, মটরশুঁটি, কাঞ্চন, পারিজাত, মাধবী, গামারী আর মৃদুগন্ধের ছোট ছোট বরুণ ফুল, গোলাপ, ডালিয়াসহ হাজারো নামের বর্ণালী ফুলতো বসন্তের সাজ আভরণ হিসেবেই বিবেচ্য।
এছাড়া নাম বলতে না পারা আরো অনেক ফুল, ফল, গাছ পালা, নদী নালা ও প্রকৃতির স্মৃতিময় বর্ণনা ।
বাংলার সর্বত্রই মেলার মৌসুমও শুরু হয়ে যায় বসন্তে । এ ছাড়া নানা বৈচিত্রময় উৎসবের কথা ও মনে করিয়ে দেয় ।
যদিও আমরা গ্রামের মেঠোপথ, নদীর পাড়, গাছ, মাঠভরা ফসলের ক্ষেত , সবুজ, শ্যামল, ছায়া ঘেরা, মায়া ভরা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে দূরে; বহু..................................দূরে, সুদূর প্যারিস ! তারপরও বসন্তের সে আবেদন মনের ভিতর থেকে একটুও কমেনি ! তাই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমর কবিতার মতোই বলছি — 'ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত'
'দৃষ্টি খুলে রাখো, দেখো এবং আবারো দেখো; তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে সেই নয়নাভিরাম সৃষ্টিরাজি দেখে ।'
এর বাইরে ফাল্গুনের আরেক পরিচয় ভাষা শহীদদের তপ্ত শোণিতশোষণের মাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ৮ ফাল্গুন মাতৃভাষা ‘বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য রফিক, সালাম, জববার প্রমুখ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। বারবার ফিরে আসে ফাল্গুন, আসে বসন্ত; শোক নয়, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী মোকাবিলায় দুর্বিনীতি সাহস আর অপরিমেয় শক্তি নিয়ে। বীর সন্তানদের অমর গাঁথা নিয়ে। যে কোন বিচারে এ এক অনন্য মাস, ঋতু নৈসর্গিক ক্যানভাসে রক্তাক্ত বর্ণমালা যেন এঁকে দেয় অনির্বচনীয় সুন্দর এক আল্পনা।
নির্মল আড্ডা বুঝি এমনই হয়, শেষ হয়ে ও হইল না শেষ ! এ আড্ডার উদারতা, প্রাঞ্জলতা ও বিশালতা যেন সমুদ্র এবং আকাশ ও ধারণ করতে পারে না !
মাধুর্যপূর্ণ সৃষ্টিশীল উপস্থাপনা, আবেগ - অনুভূতি, সময়ের সদ্ব্যবহার , উত্তম সংগঠক ও মার্জিত সব রুচিশীলতার অপূর্ব এক সমন্বয়ে এ আড্ডাকে পূর্ণাঙ্গ দান করেন - - - হাসনাত জাহান
যার কথা বলার ধরণটাই যেন শিল্প বা আবৃত্তি, পুরো অবয়ব জুড়ে রুচিশীল শিল্পের নিদর্শন তিনি - - - সাইফুল ইসলাম
প্রকৃতি ও মানব প্রেমে হাতড়ে বেড়ানো এক প্রেমিকের নাম - - - গোলাম মোর্শেদ
স্ব-রচিত বিষয়ভিত্তিক রচনার সব সম্ভারে মাতিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন - - - মোস্তফা জামান ও হারুনুর রশীদ
আমি ওয়াহিদ, শামীম ভূঁইয়া ও অন্যরা চেষ্টা করেছি তাদের সঙ্গ দিতে ও মনোযোগী শ্রোতা এবং আড্ডাবাজ হতে ।
সৃজনশীল এ সব আড্ডা যেন শেষ না হয় । এ যেন ক্ষুধা নিবারণে অনন্য এক অমিয় সুধা । এটাই যেন সর্বোচ্চ চাওয়া কিন্তু এ চাওয়া টাকা - পয়সা, আভিজাত্য, ভাব- প্রতিপত্তি দিয়ে পূরণ হয় না । এ জন্য দরকার নির্মল, সজিব, উদার ,স্বর্গ - মর্ত্যসম সৃষ্টিশীলতায় পূর্ণাঙ্গ এক হৃদয় । আর এ সব আড্ডা থেকেই বেরিয়ে এসেছে জগত বিখ্যাতরা । স্বর্গীয় এ অমিয় সুধা পেতে আপনি ও চেষ্টা করুন এবং অন্যকেও সাহায্য করুন। আর এ ক্রিয়ার মধ্যে ডুবে থাকাই আপনার - আমার অমৃত খোরাক ।
তাই আমরা অমর শিল্পী মান্না দে'র কণ্ঠে কণ্ঠ মিলাতে চাইনা যে, "কফি হাউজের সেই আড্ডাটা, আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই ………………… !" আমরা অতীতের সমৃদ্ধ - প্রাঞ্জল সব আড্ডাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই ।
বিষয়: বিবিধ
২০৫৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগ্লো...
চলুন, ছাড়িয়ে যাই...
চুক চুক
হাই, হ্যালো বলে ৪-৫ মিনিটের বেশী কথা আগানো যায় না ।
আড্ডা জমাতে হলে আপনাকে হাসিনা-খালেদাকে গালাগালি করতে হবে । অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মনে আঘাত করা কথা দিয়ে আগাতে হবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন