সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা

লিখেছেন লিখেছেন জিসান এন হক ০৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ০২:৩৯:৫৭ রাত

পুলিশের পূর্বানুমতি ছাড়া যেকোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক মহল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এটা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে অবাধে সভা-সমাবেশ করার অধিকার যেকোনো নাগরিক ও সংগঠনের আছে। ডিএমপির পূর্বানুমতি ছাড়া রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সবার জানা, আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো জনগণকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়, সেই কাঠামোর মধ্যে থেকে যেকোনো নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত একটি অধিকার। কোনো একটি বিষয়ে গণজমায়েতের আয়োজন করে রাজনৈতিক মত তুলে ধরার অধিকার রাখে যেকোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী কিংবা সংগঠন। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হলো সমাজে বহুত্ববাদের সহ-অবস্থান। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানেও সভা-সমাবেশের অধিকারকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন, তাই অন্য কোনো বিধান বলে এ অধিকার খর্ব করার অবকাশ নেই, যদি না রাষ্ট্রে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করে। সে জন্য জরুরি অবস্থা জারির বিধান রয়েছে। তবে সংবিধানে সুস্পষ্ট বলা আছে দেশে কখন জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাকালে নাগরিকের কিছু মৌলিক অধিকার সাময়িকভাবে রহিত করা হয়।

কিন্তু হঠাৎ করে সভা-সমাবেশের ওপর এই যে নিষেধাজ্ঞা, এতে রাজনৈতিক মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে দেশে এমন কী পরিস্থিতির উদ্ভব হলো, যাতে এই নিষেধাজ্ঞা জারির প্রয়োজন পড়ল? এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশে মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। অতি ছোঁয়াচে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মানতে লোকসমাগম এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। কারণ, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে নিরাময়ে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়নি।

পূর্বানুমতি ছাড়া ঢাকায় সভা-সমাবেশ ও জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা এবং ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের স্পষ্ট বিরোধী। সংবিধানের চেয়ে অন্য কোনো আইন বা নির্দেশ বড় হতে পারে না।

মনে রাখা প্রয়োজন, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে গণমানুষ তাদের মনে জমে থাকা ক্ষোভ প্রশমন করে থাকেন। তাদের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। তাই অবাধ মতপ্রকাশের মাধ্যমে দেশের সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা হয়ে থাকে। আর মতপ্রকাশ অবারিত না হলে এর বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে অস্বাভাবিক পথে। এটি কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। বাস্তবতা হলো প্রকাশ্য রাজনীতিবিহীন সমাজ জনমনে বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়, জনগণকে আত্মোপলব্ধি থেকে বঞ্চিত করে এবং ব্যক্তির আত্মবিকাশের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য জননিরাপত্তার কারণে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে রাখলে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হবে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর কে না জানে, অবাধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোনো কারণে খর্ব করা হলে, তা সমগ্র সমাজকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে স্থবির করে দিতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

৫৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File