চাঁদাবাজ, তোলাবাজ, অবৈধ কর-আদায়কারীর পরিণতি

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৯:২৮:২৪ রাত

হাদীস

عَنْ أَبِي الْخَيْرِ ، قَالَ : سَمِعْتُ رُوَيْفِعَ بْنَ ثَابِتٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ : " صَاحِبُ الْمَكْسِ فِي النَّارِ "

বাংলা: আবুল খায়ের রহ. থেকে বর্ণিত, রুওয়াইফি’ বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: "নিশ্চয়ই অবৈধ কর/উশর আদায়কারী (চাঁদাবাজ/তোলাবাজ) জাহান্নামে যাবে। (তাবারানীর মু'জামুল আওসাত:৪৪৯৩)

#আলোচনা: অন্যায়ভাবে জনগণের কাছ থেকে কর আদায়কারী (নিজের জন্য হোক অথবা রাষ্ট্রের জন্য হোক) জাহান্নামে যাবে। হাদীসে অন্যায়ভাবে কর/চাঁদা/তোলা আদায় সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং তার ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্র কর্তৃক হোক অথবা ব্যক্তিগত ভাবে জনগণের কাছ থেকে শরীয়াহ সম্মত যাকাত-ওশরের অতিরিক্ত আদায়কারীকে (صَاحِبُ مَكْسٍ) বলে।

বাজারের দোকানপাট, ব্যবসায়ী, বাণিজ্যিক কাফেলা, সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অত্যাচারপূর্বক বা অন্যায়পন্থায় ট্যাক্স/করের নামে হোক অথবা উশরের নামে হোক অথবা তোলা বা চাঁদার নামে হোক ইত্যাদি যাবতীয় জালিম কর আদায়কারী উদ্দেশ্য।(দ্রষ্টব্য: শরহে সুন্নাহ, ফাইযুল কাদীর:৯৯৬৫, মিরকাত, হা:৩৭০৩)

বর্তমানে বৈধ কর বা খাজনার বাইরে জনগণের উপর অতিরিক্ত কর চাঁপানো বা চাঁদার নামে যা কিছু আদায় করা হয় সবই অবৈধ। অন্য বর্ণনায় এসেছে-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "অনৈতিকভাবে ‘উশর ও যাকাত আদায়কারী (চাঁদাবাজ) জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" (আহমাদ:১৬৮৪৩, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ:২৩৩৩ আল মুসতাদরাক:১৫০৯, জামিউস সগীর:৯৯৪৭) দ্রষ্টব্য: হাদীসটি কারো কাছে যঈফ হলেও শাহেদের কারণে হাসান বা সহীহ। এমন লোক ঈমানের কারণে জাহান্নামের শাস্তির ভোগের পর জান্নাতে যাবে আশা করা যায়!

#চাঁদাবাজি_করআদায়কারীর_পরিণতি: যারা জুলম করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ আদায় করে তারা হলো মহাঅত্যাচারি। সরকারি কর্মচারি/রাষ্ট্রের ধারক-বাহক, সেবাদানকারী সংস্থার লোকজনের, ব্যবসায়ী বা গাড়ি থেকে অবৈধ অর্থ আদায় সহ যাবতীয় চাঁদা বা তোলা আদায় করা কবীরাহ গোনাহর অর্ন্তভুক্ত। আল্লাহ বলেন-

"কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর যুলম করে এবং যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।" (সূরা শূরা ৪২:৪২)

অবৈধ কর আদায়কারী বা চাঁদাবাজের পাপ সম্পর্কে সহীহ মুসলিমের হাদীসে ইঙ্গিত পাওয়া যায়! যেমন, এক ব্যভিচারী মহিলাকে রজমের শাস্তি দানের সময় রাসূলুল্লাহ সা. খালেদ (রা.)কে বলেন-

সাবধান! হে খালিদ! সেই মহান আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার জীবন, জেনে রেখো! নিশ্চয়ই সে এমন তাওবা করেছে, যদি কোনো জালিম কর আদায়কারী/চাঁদাবাজ (صَاحِبُ مَكْسٍ) ব্যক্তিও এমন তাওবা করতো তবে তারও ক্ষমা হয়ে যেতো। (সহীহ মুসলিম:১৬৯৫, আবু দাউদ:৪৪৪২)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "জুলম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে"। (বুখারী:২৪৪৭)

ইবনু ‘আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘আয (রা.)-কে ইয়ামানে পাঠান এবং তাকে বলেন, মাযলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা, তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না। (বুখারী:২৪৪৮)

#বর্ণনাকারী: রুওয়াইফি’ বিন সাবেত (রা.)

#মান: সহীহ, হাসান লিগাইরিহী

গ্রন্থ: তাবারানীর মু'জামুল আওসাত, (باب الراء » باب من اسمه رويفع ) হা:৪৪৯৩, মুসনাদে আহমাদ:১৭০০১, আবু নুআইমের "মারেফাতুস সাহাবা":২৭০৫, সহীহাহ:৩৪০৫, সহীহ আত তারগীব:৭৮৭, জামিউস সগীর:২২৮৪

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

#দরসে_হাদীস

বিষয়: বিবিধ

৬৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File