মহামারী_মুমিনদের_পরীক্ষাস্বরূপ
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৪ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৯:০২ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
১. #মহামারী_বিপর্যয়_মানুষের_কৃতকর্মের_ফল:
“তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। অনেক গোনাহ তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা ৪২: ৩০] অপর আয়াতে এসেছে-
মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রোম ৩০:৪১)অর্থাৎ স্থলে, জলে তথা সারা বিশ্বে মানুষের কুকর্মের বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বিপর্যয়’ বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাবলীর প্রাচুর্য, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম এবং ক্ষতি বেশী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি আপদ-বিপদ বোঝানো হয়েছে। [সা’দী, কুরতুবী, বাগভী]
হাদীসে এসেছে- "যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি।(ইবনে মাজাহ:৪০১৯)
২. #মহামারী_পরীক্ষাস্বরূপ:
নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-প্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা বাকারা, ২:১৫৫)
এ দুনিয়া দুঃখ-কষ্ট সহ্য করারই স্থান, কেননা এটা পরীক্ষার ক্ষেত্র। সুতরাং সম্ভাব্য বিপদ-আপদকে পরীক্ষাসরূপ গ্রহণ করে, সেগুলোকে অপ্রত্যাশিত কিছু মনে না করলেই ধৈর্যধারণ করা সহজ হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা, বিপদাপদ-বালা মুসিবত নবীদেরকে প্রদান করেন। তারপর যারা তাদের পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক।” [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩৬৯]
৩.#ভয়_দেখানো ও #তাওবার_সুযোগ
আল্লাহ আরো বলেন, আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা ফাতির: ৪৫]
সমস্ত গোনাহর কারণে বিপদ আসে না বরং কোন কোন গোনাহর কারণেই বিপদ আসে। দুনিয়াতে প্রত্যেক গোনাহর কারণে বিপদ আসলে একটি মানুষও পৃথিবীতে বেঁচে থাকত না।
এই বিপদাপদের উদ্দেশ্য এই থাকে যে, ঐ সর্বনাশী বিপর্যয় ও আপদ-বিপদ দেখে সম্ভবত মানুষ পাপকর্ম থেকে বিরত হবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে পুনরায় তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসবে।
৪.#মহামারী_শাস্তি_স্বরূপ, তবে মুমিনের জন্য রহমত:
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম ‘আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ ‘আযাব পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমাত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব। (বুখারী, মিশকাত:১৫৪৭)
৫.#গোনাহ_মাফ_হয়:
হাদীসে এসেছে যে, ‘‘মু’মিন যে কোন কষ্ট এবং দুশ্চিন্তা ও দুঃখের শিকার হয়; এমনকি তার পায়ে কাঁটাও যদি ঢুকে যায়, তাহলে তার ফলে মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
৬. মর্যাদাপ্রাপ্তি:
মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও এতে মৃত্যু বরণকারী শাহাদাতের মর্যাদা পেয়ে থাকে।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্বা‘ঊন (মহামারী)’র কারণে মৃত্যু মুসলিমদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত:১৫৪৫)
৭. মহামারী হলে করণীয়:
#আক্রান্ত স্থানে না যাওয়া এবং আক্রান্ত স্থান থেকে পলায়ন না করা-
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে ওখান থেকে ভেগে যাওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে ভেগে যাবার মতো। প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেখানেই ধৈর্য ধরে অবস্থানকারী শাহীদের সাওয়াব পাবে। (আহমাদ, মিশকাত:১৫৯৭)
উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা কোন ভূখণ্ডে প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পড়তে শুনবে, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভূখণ্ডে তোমরা যদি থাক, তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।’’ (বুখারী: ৩৪৭৩, মুসলিম: ২২১৮)
#আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া:
উকবাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুহফাহ্ ও আব্ওয়া (নামক স্থানের) মধ্যবর্তী জায়গায় চলছিলাম। এ সময় প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকার আমাদেরকে ঘিরে ফেলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক’’ ও সূরা ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্না-স’’ পড়ে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে ‘উকবাহ্! এ দু’টি সূরা দ্বারা আল্লাহর আশ্রয় চাও। কারণ এ দু’ সূরার মতো অন্য কোন সূরা দিয়ে কোন প্রার্থনাকারীই আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেনি। (আবূ দাঊদ:১৪৬৩)
আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বারাসি অলজুনূনি অলজুযা-মি অমিন সাইয়্যিইল আসক্বা-ম।’
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’’ (আবু দাউদ:১৫৫৪, নাসাঈ:৫৫০৮)
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদকালে এই দুআ পাঠ করতেনঃ
" لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَلِيُّ الْحَلِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ "
(তিরমিযী:৩৪৩৫)
#প্রতিষেধক ও সাবধানতা অবলম্বন:
উসামাহ্ ইবনু শরীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি ঔষধ ব্যবহার করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। হে আল্লাহর বান্দাগণ! চিকিৎসা করো। কেননা বার্ধক্য রোগ ব্যতীত আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার নিরাময় সৃষ্টি করেননি। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ,মিশকাত:৪৫৩২)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিপদে ধৈর্যধারণ ও যাবতীয় অকল্যাণ থেকে দুরে রাখুন। সবাইকে ক্ষমা করে, প্রশান্তি নাযিল করুন। আমীন।
#সামসুল_আলম (#নীল_মুসাফির)
বিষয়: সাহিত্য
৬৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন