আল্লাহর ক্ষমাযোগ্য হওয়ার চারটি গুণ
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৬ মার্চ, ২০১৭, ০৩:৫৭:০৭ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্লাহ বলেন-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(৩৯:৫৩)
পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসলে তথা ক্ষমা চাইলে তিনি তার বান্দাহকে ক্ষমা করে দেন। এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর মহা ক্ষমাশীলতার কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি অপর আয়াতে কার জন্য ক্ষমা তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন-
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ
নিশ্চয় আমি তার জন্য বড় ক্ষমাশীল যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজ করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বাহা:৮২)
আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহর ক্ষমাযোগ্য হওয়ার জন্য চারটি শর্তারোপ করা হয়েছে।
১. তাওবা করা: কুফর, শিরক, নিফাক, বিদ'আত তথা যাবতীয় পাপাচার থেকে তাওবা করা এবং সৎপথে ফিরে আসা। ইবনে আব্বাস( রা.)-এর মতে শিরক থেকে; কাতাদা (রহ.) মতে, পাপাচার থেকে তাওবা করা।
২. বিশ্বাস স্থাপন করা: অন্তর দিয়ে বিশ্বাস রাখা এবং ঈমানের যাবতীয় বিষয়াবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। ইবনে আব্বাসের রা. মতে একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস। অন্যদের মতে, আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখা।
৩. সৎকাজ করা: অন্ত:স্থ ও বাহ্যিক যাবতীয় নেক আমল করা। কারো মতে, ফরয আদায় করা এবং গোনাহ থেকে বিরত থাকা।
৪. অবিচল থাকা: সিরাতে মুস্তাকিম তথা ইসলাম তথা রাসূলের সুন্নাতের উপর অবিচল থাকা। অধিকাংশের মতে, সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপর থাকা। পাপাচার থেকে তাওবার উপর অবিচল থাকা, যাতে ঈমানের অবস্থায় মৃত্যু আসে।
সৎপথে অবিচল থাকা এবং সন্দেহ পোষণ না করা। (দ্রষ্টব্য: তাফসীরে তাবারী, ইবনে কাসীর, কুরতবী, সা'দী)
সুতরাং আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে, পাপাচার থেকে ফিরে আসতে হবে তথা তাওবা করতে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। তারপর এই অবস্থায় অটল থাকতে হবে। কেননা পুনরায় পাপের উপর ফিরে গেলে তথা পাপাচার করলে এবং সেই অবস্থায় তার মৃত্যু এসে যায়, তাহলে ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তির যোগ্য হতে হবে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:-
نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ. وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ
আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, ‘নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সূরা ১৫ হিজর:৪৯-৫০) তিনি আরো বলেন-
وَهُوَ الْغَفُورُ الْوَدُودُ
তিনিই ক্ষমাশীল, প্রেমময়। (৮৫:১৪) তিনি আরো বলেন-
وَاللَّهُ يُرِيدُ أَنْ يَتُوبَ عَلَيْكُمْ وَيُرِيدُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الشَّهَوَاتِ أَنْ تَمِيلُوا مَيْلًا عَظِيمًا
আল্লাহ তোমাদের তওবা কবুল করতে চান। আর যারা প্রবৃত্তির অনুসারী তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও। (৪:২৭)
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত তাওবা ও ক্ষমাপ্রার্থী হওয়ার তাওফিক দান করুন। رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
তথ্য: পবিত্র কুরআনে-
الْغَفُورُ আল গফুর (ক্ষমাশীল) শব্দটি এসেছে ১১ বার ভিন্নভাবে:-
الْغَفُورُ الرَّحِيمُ :( ১০:১০৭; ১২:৯৮; ১৫:৪৯; ২৮:১৬; ৩৯:৫৩; ৪২:৫; ৪৬:৮)
وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ: (৬৭:২)
وَهُوَ الرَّحِيمُ الْغَفُورُ: (৩৪:২)
الْغَفُورُ ذُو الرَّحْمَةِ: (১৮:৫৮)
وَهُوَ الْغَفُورُ الْوَدُودُ :( ৮৫:১৪)
غفار( গাফফার) শব্দ এসেছে ৫ বার: ২০:৮২; ৩৮:৬৬; ৩৯:৫; ৪০:৪২; ৭১:১০
التَّوَّابُ শব্দ এসেছে ১১বার :২:৩৭, ৫৪,১২৮,১৬০; ৪:১৬,৬৪; ৯:১০৪, ১১৮; ২৪:১০; ৪৯:১২; ১১০:৩
সম্পাদনা ও সংকলনে: সামসুল আলম দোয়েল
বিষয়: সাহিত্য
১০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন