শেখ রোকন
দিন দশেক ফেসবুকের বাইরে থেকে অন্তত দশটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেছি। তার মধ্যে রয়েছে ইন্টারেস্টিং একটা বই পড়া- 'টুইটার অ্যান্ড টিয়ার গ্যাস: দ্য পাওয়ার অ্যান্ড ফ্রেজাইলিটি অব নেটওয়ার্কড প্রোটেস্ট'। মার্কিন প্রবাসী তুর্কি সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক 'জায়নেপ তুফেকচি' (জয়নাব তৌফিকী?) বইটিতে দেখিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম নির্ভরতা কীভাবে সামাজিক আন্দোলন সংগ্রাম অকার্যকর করে তুলছে। অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট থেকে আরব বসন্তের উদাহরণ টেনেছেন। তিনি নিজে তুরস্কের গাজী পার্ক আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। বস্তুত গাজীপার্ক আন্দোলনে টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ার মধ্যে দাঁড়িয়েই তার প্রথম এর মোকাবেলায় টুইটারে 'আগুনঝরা' পোস্টের অসারতার কথা মনে হয়েছিল। তখনই বইটি লেখার চিন্তা তার মাথায় আসে।
জয়নাব দেখিয়েছেন, সব আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যম নির্ভরতার কারণে। তার মতে, কোনও ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে যে 'হাইপ' ওঠে, তার সঙ্গে 'গ্রাউন্ড রিয়েলিটি' পাল্লা দিয়ে পারে না।
ফলে মুখ থুবড়ে পড়াটা অনিবার্য হয়ে ওঠে। ঠেলাগাড়িতে জেট ইঞ্জিন বসালে যা হতে পারে, তাই।
জয়নাব দেখিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমে সংঘাত, অন্তর্ঘাত, উপদলীয় কোন্দলের ঝুঁকি বেশি। উপরন্তু প্রচলিত মাধ্যমের চেয়ে সামাজিক মাধ্যম সেন্সর বা নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি করা সরকার বা বৃহৎ পুঁজির জন্য 'বেশি সহজ'। তিনি দেখিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমের কারণে আগে যে 'জাগরণ' ১০ বছরে হতো না, এখন সেটা ১০ ঘণ্টায় সম্ভব। কিন্তু তা ১০ দিনও টেকসই হয় না।
বইটি পড়তে পড়তে আমাদের দেশের গণজাগরণ মঞ্চ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, এমনকি বিএনপির আন্দোলনও মেলালাম। মেলালাম এত ইস্যু থাকতেও কোনও কার্যকর সংগঠন দানা বাঁধতে না পারার উদাহরণগুলো। ঘটনা সত্য, সাক্ষীও সবল।
শেখ রোকন: সাংবাদিক, লেখক, গবেষক। লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন