মিনার রশিদ
প্যারিস -নিউইয়র্ক বনে যাওয়া একটি শহরের কিছু সংখ্যক বনি আদম গতকাল এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন । তাদের সম্মুখে দুটি চয়েজ ছিল - হয় আগুনে পুড়ো , নয় টাওয়ার থেকে লাফ দাও !
এই হতভাগা বনি আদমগণ একটি তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন । জীবিত থাকতে নিজেদের শৌর্য বীর্যের অনেক গল্প শুনে গেছেন ! কিছুদিনের মধ্যে ইউরোপ আমেরিকা থেকে লোকজন এসে এদেশে থাকা শুরু করবে বলে জেনে গেছেন ।
আরো শুনেছেন জিডিপি বৃদ্ধির গল্প , মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর গল্প, বিশ্ববাসী কীভাবে অবাক বিস্ময়ে এদেশের উন্নয়ন দেখে টাস্কি খায় সেই সব গল্প । গোলামের পুত গোলাম বিশ্বব্যাংককে তাড়িয়ে নিজের পয়সায় পদ্মা সেতু তৈরি করার গল্প ।
তাতে ছত্রিশ ইন্চির বুক ফুলে বিয়াল্লিশ ইন্চি হয়েছে । কিন্তু কঠিন সময়ে বিল্ডিং থেকে নামার জন্যে একটি সামান্য মেকানিকেল মই কিংবা লাফ দিয়ে পড়ার মত একটি নিরাপদ সেইফটি নেট বা এয়ার ব্যাগ পেলেন না ( ছবিতে দেখুন )।
যে রাষ্ট্রটিকে নিয়ে গর্ব করে গেছেন সেই রাষ্ট্রের কর্তব্য ছিল বিল্ডিং কোড মেনে অট্রালিকা তৈরিতে মালিক পক্ষকে বাধ্য করা । কারণ এই বনি আদমদের পকেটের টাকা দিয়েই তাদেরকে প্রকৌশলী বানিয়ে এগুলি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ।
এরকম প্রতিটি টাওয়ারে এ নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং টিম , প্রতিটা ফ্লোরে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা এবং এগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত ছিল । সেগুলো ঠিকভাবে মেইনটেইন করা হচ্ছে কি না - সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ছিল ।
এসব উঁচু বিল্ডিং এ আগুন লেগে গেলে মানুষজন কীভাবে বেরিয়ে আসবে সেসব চিন্তা ভাবনা করার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের এসব প্রকৌশলী এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসকদের । এক্ষেত্রে বিল্ডিং ঘেষে স্টীলের তৈরি সিঁড়ি ব্যবহার করা হয় । সংযুক্ত ছবিটি দেখলেই বোঝবেন এটি থাকলে উদ্ধার প্রক্রিয়া কতটুকু সহজ হতো ।
প্রথম পর্যায়ের এই ব্যবস্থা কোনো কারণে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রীয় উপায় উপকরণ নিয়ে দ্রুত সময়ে আগুন নিভানো এবং আটকে পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল । স্পষ্ট হয়েছে যে রাষ্ট্রের এই অর্গানগুলো ঠিকমতন কাজ করছে না । অন্য কথায় এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে পড়েছে ।
এতগুলি ম্যানেজমেন্ট ধাপ একে একে ব্যর্থ হয়েছে । আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখেছি এবং মিডিয়ার বিশেষ কল্যাণে এটাও জেনেছি যে উদ্ধার অভিযান সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী !
ইদানিং সবকিছুতেই সরকার প্রধানের এই কিছিমের মনিটরিং এর গল্প শোনা যাচ্ছে ! অথচ যে জিনিসগুলি মনিটরিং করার কথা তা হচ্ছে না ।
অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা যথাযথ মজুদ না থাকলে উঁচু টাওয়ারগুলি একেকটি ডেথ -ট্র্যাপ ছাড়া অন্য কিছু নয় । কাজেই এটা শুধু দুর্ঘটনা নয় - এগুলি স্রেফ খুন । গণপূর্তমন্ত্রীও একথা বলেছেন । কিন্তু মালুম করতে পারেন নাই যে তিনি নিজেও এই খুনীদের অন্যতম একজন ।
ইনারা কেউ এই দেশটিকে সিঙ্গাপুর আবার কেউবা সুইজারল্যান্ড বানিয়ে ফেলেছেন । মরার আগে আকাশ থেকে সেই প্যারিস এবং নিউইয়র্কের রূপ ভালোভাবেই দেখে গেছেন এই বনি আদমেরা ।
এই জাতির সমস্ত দুর্ভোগের পেছনে এখন একটি কারণই কাজ করছে । সেটি হলো কর্তা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার অনুভূতি মারাত্মকভাবে লোপ পেয়ে গেছে । এই জবাবদিহিতা আগে যতটুকু ছিল এখন সেটুকুও ধ্বংস হয়ে গেছে ।
এই দেশে অনেক টাকা খরচ করা হয় যেগুলি জনগণের জীবন মানের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় । অনেক চেতনার ভূতের জন্যে পাবলিকের কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করা হচ্ছে ।
অথচ
কয়েকটি লম্বা মেকানিকেল মই , সেইফটি নেট , এয়ার ব্যাগ কেনার টাকা হয় না ।
যারা এগুলি বলবে তাদের মুখ নানা কিছিমে বন্ধ করে দেয়া হবে । এই কর্তাব্যক্তিরা জনগণের জীবন বাঁচাতে ব্যবহৃত সরন্জামগুলি না চিনলেও মানুষের মুখকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যে জল কামান , পিপার স্প্রে এগুলি চিনতে বা কিনতে ভুল করেন না ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন