মিনার রশিদ
১.
বেশ কিছুদিন আগের কথা । ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়টি তখনো শুরু হয় নি । ত্রিশাল নামাপাড়ায় কবি কাজি নজরুল ইসলাম স্মৃতি জাদুঘরটি দেখতে
গিয়েছিলাম । অন্য কিছু জিনিসের সাথে সেখানে একটি বসার পিঁড়ে সংরক্ষিত আছে । তেমনি ভাবে কাজির শিমলায় সংরক্ষিত আছে একখানা খাট ।
দাবি করা হয়, ত্রিশালে অবস্থানকালীন সময়ে কবি নজরুল এই দুটি ব্যবহার করতেন !
ব্যাপার খানা এমন যে পুরো ত্রিশালে যত পুরণো খাট -পালং -পিঁড়ে -টুল আছে - তা সবই বোধ হয় সেখানকার নজরুল স্মৃতি জাদুঘরে রাখা যায় ।
সেগুলি কবি নজরুল ত্রিশালে অবস্থানকালীন সময়ে ব্যবহার করেছিলেন। অথচ বাস্তবে তিনি ত্রিশাল এসেছিলেন একজন ছন্ন ছাড়া নিরীহ বালক বা মতান্তরে ভাউন্ডুলে বালক হিসাবে । এমন বালককে ভিভিআইপি মর্যাদায় রাখা হবে , তার ব্যবহৃত জিনিস পত্র প্রায় শত বছর পর পাওয়া যাবে - সত্যিই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ।
ত্রিশালের একজন নগন্য মানুষ হিসাবে তা বিশ্বাস করতে আরো কষ্ট হয়।
আসলে এই সব দুখু মিয়াদের কেউ দেখে না । এদের মধ্যে অগত্যা দুয়েকজন কবি নজরুল হয়ে পড়লে টানাটানি লেগে যায় ।
আমরা নজরুল একাডেমি তে ( দরিরামপুর হাইস্কুল ) পড়া কালীন সময়ে কে কবি নজরুলের আসল সহপাঠী , সেটা নিয়েও মুরব্বীদের যুদ্ধ দেখার সুযোগ হয়েছিল । এগুলি নিয়ে পরবর্তিতে লেখার ইচ্ছে রয়েছে ।
তিনি ত্রিশালে থাকা কালীন এত আদর যত্ন পেয়েছেন অথচ বিখ্যাত হওয়ার পর একবারের জন্যেও আর ত্রিশালে / ময়মনসিংহে আসেন নি ! অথচ পূর্ব বাংলার অনেক জায়গায় তখন তিনি গিয়েছিলেন । এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে জানি না ত্রিশালের আবেগ আহত হয় কি না । কেন যেন মনে হচ্ছে , এটি নিয়ে গবেষণা করলে সাদা কালো জীবনের অনেক জবাব বেরিয়ে আসত ।
কেন জানি এই কিছিমের গবেষণাকে আমাদের গবেষকগণ হেইট করেন । সত্য বের করার চেয়ে কল্পনার ফানুশ উড়াতেই তথাকথিত এই গবেষকগণ বেশী পছন্দ করেন ।
তাই আমাদের ইতিহাসের মালমসলা সংগ্রহের নমুনাগুলি প্রায়শই অদ্ভুত হয়ে থাকে । কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানোর মত আমরা ইতিহাস বানাই । যারা এটি গিলতে চায় না , তাদেরকে কিলিয়ে গেলাতে চাই ।
২.
অনেকটা একই কিছিমে দৈনিক সমকাল ৫০ বছর পর স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্লভ তারবার্তাটি আবিস্কার করেছে । এই দুর্লভ দলিলের বর্তমান মালিক রোকেয়া চৌধুরী সেটি দিতে চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে । প্রতীয়মান হচ্ছে , এ সংক্রান্ত আয়োজন সম্ভবত ঠিক। করাই আছে । এখন শুধু শুভ ক্ষণের অপেক্ষা !
দিন যত যাবে , এরকম দুর্লভ দুর্লভ দলিল সমকাল রা ততই আবিস্কার করতেই থাকবে ।
সমকালের সেই রিপোর্ট থেকে জানা গেছে ,
রোকেয়া চৌধুরীর স্বামীর কাছে সেই টেলিগ্রামটি পৌছে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ । সেই তারবার্তাটি তিনি তাঁর বুকের সাথে আগলে রেখেছেন যুদ্ধের নয়টি মাস । যে কাগজটিকে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এমনভাবে আগলে রাখলেন , যুদ্ধশেষে সেই অমূল্য সম্পদটি মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসংগ্রামী কমান্ড্যান্ট মানিক মিয়া তাঁর নেতা কিংবা তখনকার সরকারের কাছে জমা দিলেন না ! এটি সত্যি বিষ্ময়ের ব্যাপার !
জাতিকে না জানিয়ে তিনি সেই কাগজটি আবারো আগলে রাখলেন কুড়ি বছর - ১৯৯১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত । এরপর তাঁর স্ত্রী ও কন্যা আগলে রাখলেন আরো দেড় কুড়ি (২৮) বছর !
কিন্তু কেন এই আগলে রাখা ?
সমকালের ঐ প্রতিবেদনটিতে এই প্রশ্নটি নেই । সেই প্রশ্নের জবাব তো দূরের কথা ।
দেখা যাবে এখন থেকে দশ পনের বছর পর তথাকথিত এই দুর্লভ দলিলের উপর অবিশ্বাস পোষণ করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে গণ্য হবে । কপাল মন্দ হলে আরো কিছু জুটতে পারে ।
জানি না কোন্ দিকে চলছে প্রিয় এই জন্মভূমি ?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন