আমি অত্যন্ত হতাশা ও বিষাদগ্রস্থ আজকের একটি হয়রানিমূলক ঘটনার জন্য। অনেক আসহায়ত্ত অনুভব করছি নিজের স্বাধীন দেশে। অন্যান্য দিনের মত আজকের দিনেও অফিস করছি পুরো টিমকে নিয়ে। সবাই কাজে ব্যস্ত। ঘড়িতে বাজে দুপুর ২টা। কাজের অতিরিক্ত প্রেসারে নামায ও লাঞ্চ তখনও করা হয়নি।
হঠাৎ অফিসে প্রবেশ করেন একজন পুলিশ অফিসার (এস. আই. নাজমুল) ও সাথে ২ জন সহকারি। প্রথম রুম পার হয়ে দ্বিতীয় রুমের মাঝে এসে দাঁড়ান। সামনের দু’টি রুমে সবাই কাজ করছে। ধমকের সাথে জিজ্ঞাসা করেন– এটা কি, এখানে কি কর?
একজন বলে এটা অফিস, এখানে আমরা ওয়েব বেইসড অ্যাপলিকেশন তৈরি করি।
— মানে? কি অ্যাপলিকেশন?
— ওয়েব বেইসড অ্যাপলিকেশন। এগুলো ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টে কাজে লাগে। ইংরেজিতে কিছু বলা শুরু করায় সে বলে, ইংরেজি বেশি জানস? তোদের থেকে আমরা হাজার গুণ বেশি জ্ঞান নিয়ে চলি।
কাজের একটি রুমে ঢুকেন, আমরা চেয়ার এগিয়ে দেই।
— এই সবার মোবাইলগুলো জমা কর। এই ব্যবসার অথরাইজেশন কি?
— আমাদের ট্রেড লাইসেন্সটি দেখাই।
কথা মতো উনার সহকারিরা দু’রুম থেকে সবার মোবাইলগুলো নিয়ে ওনাদের একটি ব্যাগে রাখল।
উনি লাইসেন্সটি হাতে না নিয়েই বলেন-
— ট্রেড লাইসেন্স কোন অথরাইজেশন হলো? টাকা দিলে আমি প্রতি ঘন্টায় বিশ হাজার ট্রেড লাইসেন্স দিব। ১০০০% শিউর সবগুলি জামাত-শিবির (এরকম আরও অনেক গুলো কথা বলে এবং ধমক দিতে থাকে)। এই সবাইকে থানায় নিয়ে চল, সবগুলো মেশিন (কম্পিউটার) সংগ্রহ কর!
অফিসের সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরে। আমি পুলিশ অফিসারকে বোঝানোর চেস্টা করি যে, বর্তমানে সরকার তো ফ্রিলান্সার ও আইটি উদ্যোক্তাদের এই ধরনের কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করছেন। আর আমাদের তো ট্রেড লাইসেন্স আছেই। এর বাইরে আর কি দরকার তা আমাদের আপাতত জানা নেই। এরই মধ্যে আমাদের আরেক টিম মেম্বার লাঞ্চ করে ফিরেছেন। এবং আমার ওই টিম মেম্বারকে পুলিশের সাথের লোক দরজা থেকেই মোবাইল রেখে ভিতরের রুমে নিয়ে আসে। এসআই নাজমুল ধমক সূরে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, তোমার নাম কি? বয়স কত? ফোন নাম্বার, ঠিকানা.. ইত্যাদি ইত্যাদি।
— শুধু ‘ফরহাদ’ ডাক নাম বলায় বলল, আগে পিছে কিছু নাই? এরকম ছাগইল্যা নাম বলস কেন?
— বাড়ি কুমিল্লা বলায় অফিসার জিজ্ঞেস করে, কুমিল্লা থেকে কিভাবে জানলি এখানের চাকরির খবর?
— বলল এখান তো ইন্টারনেটের মাধ্যমে চাকরির খবর পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকেই জানা যায়।
এরপর যে কাজটা করল সেটা খুবই মর্মান্তিক। ফরহাদের সত্তর ঊর্ধ্ব বাবাকে ফোন দিয়ে অযথা হয়রানীমূলক কতগুলো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল। এরই মধ্যে ফরহাদ অফিসারকে অনুরোধ করল যে আমার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত আমার সাথে একটু কথা বলতে দিন, উনি অনেক টেনশন করবেন।
অফিসার প্রতি উত্তরে বলল, টেনশনের দেখসোস কি? থানায় নিয়া যখন ঢুকামু তখন তো টেনশন শুরু হবে।
তারপর আবার আমি অফিসারকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে, আমাদের এখানে কোন প্রকার অবৈধ কাজ হচ্ছে না। আপনি নিজে যাচাই করে দেখতে পারেন। আমাদের ট্রেড লাইসেন্স ও পার্টনারশিপ ডিডস’টা (নোটারি পাবলিক করা) দেখতে পারেন।
কিন্তু তিনি বারবার বলেন যে, অথোরাইজেশান পেপারস দেখা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম অথোরাইজেশান পেপারটা কি বা কিভাবে সংগ্রহ করা যায়? তিনি বললেন, এটাতো তোরা খুঁজে বের করবি! সেটা আমি বলব কেন?
উদাহরণস্বরূপ আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী একটা আইটি ট্রেনিং সেন্টারের কথা বললাম যে, তারাও তো শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চলছে। এসআই সাহেব আমাদের নয়-ছয় বুঝালেন যে, তারা তো শুধু ট্রেনিং দেয় কিছু বিক্রি করে না; তোমরা তো সফটওয়্যার বিক্রি কর। এসব বলে লাভ নেই আমি মেশিনপত্র যা আছে সব নিয়ে যাই জিডি করে রাখি এরপর দেখি তোমরা কেমনে ছুটাও? এগুলা আর জীবনেও ফিরে পাবানা।
এই কথা শোনার পর মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল, নিজেকে সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হল।
বছরাধিক কাজ করা প্রজেক্টগুলোর কি হবে? জীবন বুঝি এখানেই থেমে যাচ্ছে। একজন সরকারি অফিসারের অজ্ঞতার জন্য কি এতগুলো জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে? একটি আইটি স্টার্টআপ বিলীন হয়ে যাবে?
এরপর পাশ থেকে অফিসারের একজন সহকারী চোখ ইশারা করে আমায় এক কোণায় ডেকে নিয়ে গেল এবং বলল দশ হাজার টাকা খরচ দিয়া দাও, এগুলো আর বাড়িয়ে লাভ নাই।
অফিসারকে রিকোয়েস্ট চলছে, আমরা ওনার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছিলাম যে আমাদের মিসিং গুলো কি কি? কিন্তু উনি উনার সেই পুরোনো অযৌক্তিক কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন যে সরকারি রিকোগ্নেশান লাগবে। কিন্তু কি ধরনের রিকোগ্নেশান উনি বুঝাচ্ছেন তা উনি পরিস্কার করছেন না। এক পর্যায়ে উনি ডিসি স্যারের অনুমোদনের কথা বললেন আর বারবার বলছিলেন অনেক কাগজপত্র লাগে আইটি ব্যবসা করতে।
অবশেষে তাকে আশ্বস্ত করা গেল এই বলে যে, আমরা ডিসি স্যারের কাছ থেকে অনুমোদন নিব এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুব শিগগির জোগাড় করে নিব।
আমাদের দেওয়া কিছু টাকা এবং সবার মোবাইল তার সহকারিকে ফেরত দিতে বলল এবং হুমকি দিয়ে গেল, এর পরেরবার আসলে কিন্তু সব কিছু নিয়ে যাব।
এই ঘটনার পর আমরা সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং একজন টিম মেম্বার চলেও গেছেন। আমাদের অপরাধটা কোথায়? কেন এভাবে একজন পুলিশ অফিসার যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবে? একটা আইটি ফার্মের অস্তিত্ত কি একজন পুলিশ অফিসারের কাছে নির্ভরশীল? সরকার যেখানে দেশকে ডিজিটালাইজেশন করার লক্ষ্যে প্রাণপণে চেষ্টা করছে, সেখানে কেন একটা আইটি স্টার্টআপের এত বঞ্চনা?
এই পরিস্থিতিতে আমাদের কি করণীয়? বিজ্ঞজনদের সহযোগিতা কামনা করছি।
[মো. খালিদ উদ্দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে]
পাঠক মন্তব্য
আইটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বরকে জিগান
অবৈধ সরকারের কাছে এর চেয়ে আর কি আশা করবেন ? সুদিনের অপেক্ষা করেন
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন