প্রশ্ন: আমি একটা ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে প্রশ্নটা করতে চাচ্ছি তাহলে বুঝতে সহজ হবে।
‘জামান সাহেব আমাকে ৩০ বছর আগে (১৯৮৬ সালে) ১০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন যা দিয়ে আমি এক খন্ড জমি (৩ কাঠা) এবং কিছু স্বর্ণ গহনা (১ ভরি) ক্রয় করি (যার বর্তমান মূল্য কমছে কম ২৫-৩০ লক্ষ টাকা)।
কোনো বিশেষ কারণে আমি সেই ১০ হাজার টাকা আর পরিশোধ করতে পারিনি। এখন, আমি তাকে সেই টাকা পরিশোধের জন্য যখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা নিয়ে পেশ করি তখন তিনি বললেন, আপনি কি আমার সাথে বিতলামি (মজা) করেন ? আমি বললাম, কেন আমি আপনার সাথে বিতলামি করবো।
প্রথমেই আমি আপনার কাছে মাফ চাই টাকাটা দেরি করে পরিশোধ করার জন্য। তিনি বলেন যে, ভাই, আপনি ১০ হাজার টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছেন ৩০ বছর আগে, আর্, এখন আপনি সেই ১০ হাজার হাজার টাকা পরিশোধ করতে চাচ্ছেন আমাকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েই। আপনি কি জানেন, ৩০ বছর আগের ১০ হাজার টাকা এখনকার কত টাকার সমান?
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কত ? তিনি বললেন, যদি শুধু ৩০ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করি তাতে কমছে কম ১ লক্ষ টাকা তো হবেই। আপনি আমাকে আমার পাওনা পরিশোধ করতে চাইলে ১০ হাজার টাকার বদলে ১ লক্ষ টাকা দিবেন , তাহলেই, আমি নিব ; অন্যথায়, আমি গ্রহণ করবো না।
যদিও তার হিসাব অনেকটা ঠিক। কারণ, শায়েস্তা খানের আমলে ১ টাকার দাম এমন ছিল যে– ১ টাকায় ৪০ মণ চাল পাওয়া যেত, আর এখন ৪০ মণ চালের দাম কত! । এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমি কি করবো বুঝতেছিনা।
আমি যদি সেই ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা দেই তাহলে বাকি টাকাটা (৯০ হাজার) কি সুদ হবে কিনা?’
বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। আশা করি, সবার উপকারে আসবে।
নামঃ রুবেল রানা, ঠিকানাঃ দঃ দনিয়া, শ্যামপুর, ঢাকা-১২৩৬।
উত্তর: যদি দশ হাজারের উপর অতিরিক্ত টাকা দেন, তাহলে সেটি সুদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ঋণ নিয়ে, তা আদায় করতে গড়িমসি করা, অহেতুক দেরি করা এটি মারাত্মক গোনাহের কাজ। একাজ করা মোটেও উচিত নয়।
যদি আগে কোনো চুক্তি না থাকে বা এভাবে ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত টাকা দেবার প্রচলনও না থাকে, তাহলে আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে তার ঋণ পরিশোধের পর, নিজ থেকে খুশি হয়ে কিছু টাকা হাদিয়া স্বরূপ প্রদান করেন, তা যত টাকাই হোক না কেন সমস্যা নেই।
কিন্তু ঋণদাতার দাবির প্রেক্ষিতে প্রদান করলে তা সুদ হিসেবে হারাম হয়ে যাবে। এমনিতে স্বেচ্ছায় হাদিয়া স্বরুপ প্রদানে কোনো সমস্যা নেই।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একজন লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তার (প্রাপ্য) উটের তাগাদা দিতে আসে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, তার চেয়ে উত্তম বয়সের উটই পাচ্ছি। লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে সেটি দিয়ে দাও। কেননা, মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে। [বুখারী, হাদীস নং-২৩৯২]
উত্তর লিখেছেন: লুৎফুর রহমান ফরায়েজী । সূত্র: আহালে হক মিডিয়া
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন