প্রশ্ন: আসসালমু আলাইকুম মুফতি সাহেব, আমার একটি জানার বিষয় আছে। সেই বিষয়টি হয়ত আপনার কাছে কোনও গরুত্বই নেই কিন্তু বিষয়টি আমার মনে বারবার চলে আসছে এবং ইসলাম ও তার প্রচারকদের সম্পর্কে যে ধারণা এতদিন রেখে আসছিলাম সেই বিষয়ে তীব্র দ্বন্দ তৈরি হচ্ছে, যে ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি অথবা ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম আর এর প্রচারক বা প্রতিষ্ঠাতারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বদা ব্যাপৃত কিন্তু বর্তমানের পরিপেক্ষিতে অতিতের মুসলমানদের পারস্পরিক লড়াই ও মারকাটের ইতিহাস দেখে মনে হচ্ছে ইসলামের শান্তিটা আসলে কোথায়?
তবে কি ইসলামের শান্তির অন্য কোনও মর্মার্থ আছে? ইসলামের শান্তির বাস্তবতার ঘটনা কতটা?
বাস্তব পৃথিবীতে বিভিন্ন চরিত্রের মানুষের উপস্থিতি এবং গণতন্ত্রের প্রসারতার ব্যাপকতার মধ্যে ইসলামের অন্যায়ের বিরুদ্ধে চরম বিরোধিতার মানসিকতা ও সেই সাথে ইসলামের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বিশুদ্ধ হওয়া নিয়ে তীব্র দাবির মধ্যে পতিত হওয়া এগুলি কিভাবে ইসলামের শান্তির চরিত্র পরিস্ফুটিত করে?
from,
sultanul arefin, west Bengal, India
উত্তর: আপনার প্রশ্নের মূল পয়েন্ট দু’টি। যথা-
১) ইসলাম যদি শান্তির ধর্মই হয়, তাহলে অতীতে ইসলামের অনুসারীরা যুদ্ধ করলেন কেন?
২) শান্তির ধর্ম হলে বর্তমানে ইসলাম নিয়ে ইসলামপন্থীদের মাঝে পারস্পরিক বিরোধ কেন?
শান্তি শব্দটা ছোট্ট হলেও এর অর্থ ও আবেদনটা সর্বব্যাপী। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক সর্বত্র এর বাস্তবিক প্রতিষ্ঠা ছাড়া সত্যিকার শান্তি আসবে না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম এমন এক ধর্ম যা বাস্তবতার নিরিখে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার বাস্তবসম্মত উপায় বাতলে দিয়েছে।
পরিবার থেকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী শান্তির ছায়ায় নিয়ে আসতে পথনির্দেশনা প্রদান করেছে।
আর একথা বাস্তব ও যৌক্তিক যে, সেই শান্তি বিনষ্টে কতিপয় দুষ্টলোক ছিল এবং এখনো আছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতেও থাকবে। দুষ্টকে দমন না করলে শিষ্টরা শান্তিতে থাকতে পারবে না। তাই দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এটি সর্বজন বিদিত একটি মূলনীতি।
একটি সমাজ ও রাষ্ট্রকে শান্তি ও নিরাপত্তার চাদরে ঢাকতে হলে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, ডাকাত, সন্ত্রাসী, জালিম ও চোরদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের হত্যা করে হলেও সামাজিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
ইসলামের জিহাদ বা সশস্ত্র সংগ্রামের মূল স্পিরিট এখানেই। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর বান্দাদের শান্তি ও সুখময় জীবন নিশ্চিত করতে দেশ ও মানবতার দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংগ্রাম করা। ইসলামকে নিয়ে অতীতের সংগ্রাম ও যুদ্ধ জিহাদের এই ছিল বাস্তবতা।
সুতরাং ব্যাপক শান্তি প্রতিষ্ঠার মানসে ইসলামের অতীতে সংঘটিত যুদ্ধাবলী কোনো অশান্তি ছড়ানোর জন্য নয় বরং শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে অশান্তির কাটাগুলো উপড়ে ফেলার জন্যই ছিল এ যুদ্ধ বিগ্রহ।
সুতরাং এসব যুদ্ধ বিগ্রহকে অশান্তির কারণ বিবেচনা করা বিবেচক ও বাস্তববাদী মানুষের জন্য মানানসই নয়।
মুসলমানদের মতভেদ শান্তির অন্তরায়?
ডাক্তারদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তাই চিকিৎসা বিদ্যা রোগ নিরাময়ের নিয়ামক নয় বা আইনজীবিদের পারস্পরিক মতভেদের কারণে আইন শাস্ত্রকে ন্যায় ইনসাফের প্রতীক হওয়া থেকে অস্বিকার করার দাবিটা কতটুকু যৌক্তিক?
যদি এ সহজ কথা বুঝতে পারেন যে, ডাক্তারদের পারস্পরিক মতভেদ হওয়া চিকিৎসাবিদ্যা রোগ নিরাময়ের নিয়ামক হওয়া থেকে বেরিয়ে যায় না। তেমনি আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যকার বিবাদ আইন শাস্ত্র ন্যায় ইনসাফের প্রতীক হওয়া থেকে বাতিল হয় না। তাহলে একথাও বুঝা যাবার কথা যে, মুসলমানদের পারস্পরিক মতভেদ বা মতবিরোধ ইসলাম শান্তির ধর্ম হওয়ায় অন্তরায় নয়।
ইসলামকে যাচাই করতে হবে, কুরআন ও হাদীস, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনের আলোকে। কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা দল যদি ভুল করে, তাহলে এর দায়ভার পুরো ইসলামের উপর আরোপ করা অযৌক্তিক সরলীকরণ ছাড়া আর কী’ হতে পারে?
ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাহমাতাল্লিল আলামীন তথা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমাত হিসেবে রব্বে কারীম নিযুক্ত করেছেন। সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তেই, চোর ডাকাত, সন্ত্রাসমুক্ত পৃথিবী গড়তে এ ইসলামে জিহাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহের বিধান রাখা হয়েছে। যা কিছুই শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় নয় বরং শান্তি প্রতিষ্ঠার জরুরি অনুষঙ্গ।
উত্তর লিখেছেন: লুৎফুর রহমান ফরায়েজী । সূত্র: আহালে হক মিডিয়া
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন