নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব হিজাব দিবস। নারীদের সুরক্ষায় সব ধর্মের নারীদের হিজাব পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন হিজাব দিবস পালনকারী নারীরা। একই সাথে হিজাবের প্রসারে সকল নারীকে এর গুরুত্ব বোঝানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
এবারের হিজাব দিবসের স্লোগান ‘হিজাব ইজ মাই ফ্রিডম’, ‘হিজাব ইজ মাই প্রটেকশন’, ‘হিজাব ইজ মাই চয়েস’, ‘হিজাব ইজ মাই কভার’ ইত্যাদি।
হিজাব দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সিটি হল প্রাঙ্গণে হিজাব পরিহিতা নারীরা দুপুর ১২টায় জড়ো হন। সেখানে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হিজাববিরোধী মনোভাব পরিহার, ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও বিশ্ব হিজাব দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে নিউইয়র্কের সিটি হলের বারান্দায়। বাংলাদেশী, ভারতীয়, আফগান, তুরস্ক, সৌদি আরব, মিশর, কুয়েত, কাতার ও ইরানের নারীরা হিজাব দিবসের চেতনা ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ হিজাবকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং পর্দার ব্যাপারে ইসলামী বিধান অনুসরণকারী সব মুসলিম নারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গত ৬ বছর ধরে নিউ ইয়র্কে নানা রকমের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’।
হিজাব দিবস পালনকারী মুসলিম নারীরা বলছেন, মুসলিম নারীদের বিশেষ পছন্দের পোশাক হিজাব। একই সঙ্গে এটি ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতারও প্রতীক। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজেদের সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষার মাধ্যম হিসেবে মুসলিম বিশ্বে এই পোশাকটির রয়েছে বিশেষ আবেদন।
তাদের মতে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসার পাওয়া সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে হিজাব পরিহিত নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রুচির সঙ্গে মানানসই অথচ মার্জিত ও শালীন পোশাক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় হিজাবের প্রতি রয়েছে নারীদের ব্যাপক সমর্থন ও আকর্ষণ। মুসলমানদের ছাড়িয়ে হিজাব আকর্ষিত করেছে অনেক অমুসলিমকেও।
প্রসঙ্গত: কয়েক বছর আগে নাজমা খান নামক এক বাংলাদেশী ছাত্রী পোশাকের কারণে জ্যামাইকায় হেনস্তার স্বীকার হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদ, নিন্দা এবং সর্বসাধারণকে সচেতন করার জন্য হিজাব দিবস পালন শুরু হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একই চেতনায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। কারণ এখনো বিশ্বে ধর্মীয় পোশাক, জাতিগত কারণে বৈষম্যের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
হিজাব দিবসের সঙ্গে ইতোমধ্যে সংহতি প্রকাশ করেছেন ৪৫টি দেশের ৭০ জনের অধিক রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা রাজনীতিক ও স্কলারসহ টাইম ম্যাগাজিন, সিএনএনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ওয়ার্ল্ড হিজাবডে ডট কম পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৪ ভাগ নারী হিজাবে নিজেদেরকে নিপীড়িত মনে করেন না।
শতকরা ৯৩ ভাগ নারী মনে করেন তাদের ওপর হিজাব চাপিয়ে দেয়া হয়নি। বরং নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় দিন দিন হিজাবের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
বিশ্ব হিজাব দিবস অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে দ্য মুসলিম ওইমেন সোসাইটি (এমডব্লুএস) এবং মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন (এমএবি) দুইটি সংগঠন ‘অ্যাসেম্বলি ফর প্রটেকশন অব হিজাব’ নামে একটি ইভেন্টের আয়োজন করে ১৭ জানুয়ারি ২০০৪ সালে। এই সম্মেলনটি পরিচালনা করেন আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি। বাংলাদেশের এই ইভেন্টের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। অ্যাসেম্বলি ফর প্রটেকশন অব হিজাব বর্তমানে সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন