পারিবারিক কলহের জের ধরে তিন সন্তানের জননী গৃহবধূ খাদিজা বেগমকে (৩০) ঘরে বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে বার্ন ইউনিটে টানা ৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন গৃহবধূ খাদিজা।
অভিযোগ রয়েছে শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম (৫৫), ননদ সাফিয়া বেগম (৩৭) ও আরেফা (২৫) তাকে নির্যাতনের পর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় শাশুড়ি ও দুই ননদকে আসামি করে নিহতের ছোট ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় শুক্রবার সকালে একটি মামলা করেন। মামলার পর বিকেলে ননদ সাফিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আবু বকর মিয়া।
স্থানীয়রা জানায়, খাদিজার স্বামী উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া গ্রামের নবীন প্রধান পেশায় রিকসাচালক। ১৬ বছর আগে পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল করতেতুল গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের মেয়ে খাদিজা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর থেকে নানান বিষয়ে শাশুড়ি ও দুই ননদ মিলে তাকে প্রায় নির্যাতন করতো। ননদ সাফিয়া স্বামী নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকেন। অপর ননদ আরেফার বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
গত শুক্রবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে খাদিজার সঙ্গে তার শাশুড়ি ও দুই ননদের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে তারা খাদিজাকে ঘরে আটকে বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় তার তিন সন্তান মায়ের চিৎকারে ছুটে এসে এই অবস্থা দেখে তারাও চিৎকার শুরু করে। পরে প্রতিবেশীরা এসে খাদিজাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরের সেখান থেকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে ৭ দিন চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান খাদিজা।
প্রতিবেশী মোকতেজা, ইতি ও রাশিদা জানান, ঘটনার পর খাদিজার সন্তান বৃষ্টি, মেঘলা ও রিফাতের চিৎকারে এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে ওই সময় শাশুড়ি মনোয়ারা, ননদ সাফিয়া ও আরেফা দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।
বক্তারপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আছমত আলী জানান, ঘটনার পর আহত খাজিদা ও তার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দাদি ও দুই ফুপুর প্রতি অভিযোগ করেছে।
.
খাদিজার স্বামী নবীন প্রধান শুক্রবার বিকেলে জানান, তার স্ত্রী ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মৃতুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল করতেতুল গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
অফিসার ইনচার্জ মো. আবুবকর মিয়া জানান, নিহতের ভাই শুক্রবার সকালে অভিযোগ করেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেয়া হয়েছে। ওই মামলায় একজন গ্রেফতারও করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন