দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। আর সে কারণে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের উচিত, মন ছোট না করে আল্লাহর দরবারে প্রতিনিয়ত ক্ষমা চাওয়া।
আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি সর্বক্ষমতার মালিক। কাউকে ক্ষমা করার জন্য তিনি কোনো কিছুর পরোয়া করেন না। তাহলে আমাদের কেন এত সংকোচ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে?
হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে: আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম, তুমি আমার কাছে যা আশা করো এবং চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম এবং এ জন্য আমি কোনো পরোয়া করি না। (জামে আত তিরমিযী)
হজরত আনাস (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম, তুমি আমার কাছে যা যা দোয়া ও প্রত্যাশা করো, আমি তোমার সব গুনাহ মাফ করে দেব এবং এ ব্যাপারে আমি কোনো কিছুর পরোয়া করব না। হে বনি আদম, যদি তোমার গুনাহ আকাশের মেঘমালার মতো বিপুল পরিমাণও হয়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমার সে গুনাহ মাফ করে দেব এবং সে জন্য আমি কোনো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান, যদি তুমি জমিন পরিমাণ বিশাল গুনাহরাশি নিয়েও আমার দিকে ফিরে আসো এবং আমার সঙ্গে আর কাউকে শরিক না করো, তাহলে আমিও তোমার প্রতি জমিন পরিমাণ বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো। (জামে আত তিরমিযি)
আল্লাহর কাছে বান্দা তওবা ইস্তেগফার করলে আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত খুশি হন। গুনাহ থাকুক বা না-ই থাকুক প্রত্যহ তওবা ইস্তেগফার পড়া উচিত। সাইয়্যিদুল মুরসালিন নবী মুস্তফা (সা.) সম্পূর্ণভাবে বেগুনাহ ও নিরপরাধ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যহ তিনি তওবা ইস্তেগফার করতেন।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলে করীম (সা.) প্রত্যহ আল্লাহর কাছে একশতবার তওবা ইস্তেগফার পাঠ করতেন।
হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে- হুজুর (সা.) সাহাবায়ে কেরামগণকে এরশাদ করেছেন, তোমরা প্রভুর দরবারে তওবা কর।
আমাদের গুনাহ যদি আসমান সমানও হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, তবে তিনি নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দেবেন।
অন্য এক হাদিসে আছে, কোনো মুসলিম কোনো একটি গুনাহ করে ফেললে ফেরেশতারা সঙ্গে সঙ্গে আমলনামায় না লিখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে যদি ওই গুনাহগার তওবা ইস্তেগফার করে ফেলে তবে তার আমলনামায় ওই গুনাহটি লিপিবদ্ধ হয় না এবং এ জন্য কিয়ামতের দিবসে তার কোনো শাস্তিও পেতে হবে না।
হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত: ইবলিশ মহান আল্লাহর কাছে বলেছিল, যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে আদম সন্তান জীবিত থাকবে, ততদিন আমি তাদের গোমরাহ করতে থাকব। তখন আল্লাহপাক এরশাদ করলেন, আমি আল্লাহর ইজ্জত ও বুজুর্গির শপথ করে বলছি- যতদিন পর্যন্ত মানুষ তওবা ইস্তেগফার করতে থাকবে ততদিন ধরে আমিও তাদের ক্ষমা করতে থাকব।
আসুন আমরা সব মুসলিম নারী-পুরুষ আল্লাহর কাছে তওবা করি, পানাহ চাইতে থাকি। মহান আল্লাহ্ তায়ালা শেষ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতগণের গুণাহ মাফের জন্য হাজারো রাস্তা খোলা রেখেছেন। তার মধ্যে এমন কিছু ছোট ছোট আমল আল্লাহ্ পাক তার বান্দাদের জন্য নিয়ামত হিসেবে দিয়েছেন, যা পাঠ করলে গুণাহ থেকে মাফ পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ, তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার পড়ে এবং একশবার পূর্ণ করার জন্য একবার — লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির — পড়ে তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমান হয়।’ (মুসলিম)।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন