জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম সাত দিনে সংসদ সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত অ্যাসেম্বলিতে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে একমত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের ৫১৫ জন আইনপ্রণেতা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতারা বলেছেন, বর্তমান এই সংকটের জন্য তারা নিজেরা দায়ী নন। গত ৩০ বছরে কার্বণ নিঃসরণ কমাতে তেমন অগ্রগতি হয়নি জানিয়ে তারা বলেছেন, এখন সময় এসেছে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহসহ নানা দুর্যোগ। এর প্রভাবে ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মিসরের শার্ম আল শেইখ শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৭। বন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে চরমভাবে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার হুমকি রয়েছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে জলবায়ু সহনশীল ফসল উৎপাদনের দিকে যেতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে কৃষিতে কীভাবে সহজে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবস্থা করে ক্ষতি কমানো যায় তা তুলে ধরছে বাংলাদেশ।
মিসরের অবকাশ নগরী শার্ম আল শেখ-এ চলমান কপ-২৭ এর আলোচনায় ধনী দেশগুলোর ওপর অর্থছাড়ের বিষয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সবুজ অর্থনীতি চালুর বিষয়ে আলোচনা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, তার দেশ সবুজ অর্থনীতি চালু করতে ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পুরো বিশ্বকেই এই পরিবর্তনের পথ ধরার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায় তা বাংলাদেশ প্যাভিলনে তুলে ধরেছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্বমন্দার পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নতুন অজুহাত দাঁড় করিয়েছে উন্নত বিশ্ব। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। তবে সম্মেলনে অবশিষ্ট সময়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আশা করছেন আয়োজকরা।
এদিকে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়ে ধনী দেশগুলোর টালবাহানায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পরিবেশকর্মীরা সম্মেলনকেন্দ্রে ব্যাপক বিক্ষোভ করছেন। এখনই অর্থায়নের দাবি তাদের।
পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহ শেষে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিবছর যে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের কথা উন্নত দেশগুলোর ছিল তা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ইতোমধ্যেই লস অ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মান, স্কটল্যান্ড, বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়াসহ কিছু দেশ কিছু অর্থ সহায়তার অঙ্গীকার করেছে।
তিনি আরও বলেন এবারের সম্মেলনে কার্বনমুক্তকরণের ওপর অধিবেশন ও বৈঠকের জন্য পুরো একটি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে হতাশার কথা হচ্ছে সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন এবং বৈঠকে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন ছয়শর বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির লবিস্ট। এই অবস্থানকে পরস্পরবিরোধী আখ্যা দেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন