গায়ে সুয়েটার হাতে ছাতা- এমন দৃশ্যের দেখা খুব কমই মেলে। কিন্তু শীত আর বৃষ্টি যদি হয় একই লগ্নে তবে আর কী করা! বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই অন্ধকার আকাশটা আরও মুখ ভার করতে শুরু করে। মেঘের সেই অভিমান বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। রাত ১১টা থেকেই রাজধানী ঢাকার কোথাও কোথাও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর পরিমাণটা বাড়তে থাকে। রাত দেড়টা কি দুইটার পর থেকে কমবেশি সারা রাতই বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ছুটির দিন হলেও একেবারে ঘরকুনো হয়ে পড়ে না ঢাকা।
অন্যান্য দিনের চেয়ে সংখ্যায় অনেকটা কম হলেও সকাল থেকেই রাস্তায় যানবাহন ও বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলা যাত্রীদের দেখা মেলে। তবে শীতের দিনে বৃষ্টি, তার ওপর যদি বাসের জন্য ভিজতে ভিজতে অপেক্ষা করতে হয় কিংবা রিকশা অথবা অটোরিকশার ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায় তবে ভোগান্তির আর অন্ত থাকে না।
আহমেদ সবুজ। থাকেন মোহাম্মদপুরে। অফিস কাকরাইলে। পেশায় সংবাদকর্মী বিধায় শুক্রবারটা উনার কাছে অন্য দশ জনের মতো নয়। এদিনগুলোতেও উনাকে মাঝেমধ্যেই অফিস করতে হয়। আজও যথারীতি রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। বাসার গেইটের সামনে আসতেই বুঝতে পারলেন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। কী আর করা! যতটা সম্ভব দ্রুত পৌঁছুতেই হবে অফিসে। শেষ পর্যন্ত কিছুটা বিলম্বে হলেও শীতের সকালে কাকভেজা হয়ে অফিসে পৌঁছুলেন এই খবরকর্মী। তার কথায়- একে তো শীত, তার ওপর বৃষ্টি, পথে বহু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ভিজতেই হলো। মাঝে ভাড়াও গুণতে হলো দ্বিগুণ।
কবির ফেরদৌস যাবেন বাংলা মোটর থেকে গুলিস্থান। সাধারণত এটুকু জায়গার জন্য অন্যান্য সময় বাস ভাড়া ১০ টাকা। রিকশায় গেলে ন্যূনতম ১০০ টাকা। যদিও সচরাচর এই পথে কেউ রিকশায় চলাচল করে না। আজ ইলশেগুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাংলামোটর মোড়ে অপেক্ষা করছেন তিনি। বাসের দেখা নেই। সময়ও হাতে নেই। মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র দুখানা রিকশা। অন্য কোনও যানবাহনও নেই। বাধ্য হয়েই ১৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে তাকে গুলিস্তান যেতে হলো।
তিনি বলেন, ‘ভাই, সব তো ভিজে গেছে। গায়ের সুয়েটারটাও ভিজে পানি পড়ছে। পৌষ মাসের শীতে এই ভেজা কাপড় শরীরে নিয়েই সারাটা দিন অফিস করতে হবে। কী আর করা। চাকরি তো করতেই হবে। নইলে জীবনটা চলবে কী করে!’
রাজধানীর মৎস ভবন মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা সুলেমান মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছিল। সকাল থেকে রিকশা লয়ে বের হইছি। ভাবছি বৃষ্টির দিনে সকাল সকাল কয়টা টাকা কামাই করি। কিন্তু শুক্রবার, তার ওপর বেশি বৃষ্টি হওয়ায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। রাস্তায় যাত্রীই নাই। খালি খালি ভিজলাম। ভাড়া মারছি মাত্র ৬০ টাকা।’
শীতসকালে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকায় এমন ভোগান্তি শুধু আহমেদ সবুজ কিংবা কবির ফেরদৌদেরই নয়। এমন হাজারো মানুষ আছেন যারা ছুটির দিনগুলোতেও বিভিন্ন সেবামূলক পেশাদারিত্ব কিংবা জীবনের টানে পৌষের বৃষ্টি গায়ে মেখেই ছুটতে হয় গন্তব্যে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন