ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এতে আতঙ্কিত উপকূলবাসী।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগে, ঘটনার সময় ও পরে জনগণের করণীয় বিষয়গুলো জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ও ক্ষয়ক্ষতির হ্রাসে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। তাই উপকূলবাসীকে সচেতন করতে পরিবর্তন ডটকম তুলে ধরছে এসময় করনীয় দিকগুলো।
পূর্বাভাস পাওয়ার পর দুর্যোগকালে করণীয়:
* ঘরগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করে মজবুত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যেমন- মাটিতে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন অংশ বাঁধতে পারেন।
* দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।
* বিপদ সংকেত পাওয়ামাত্র বাড়ির মেয়ে, শিশু ও বয়স্কদের আগে কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি রাখুন ও সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান।
* বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় আগুন নিভিয়ে যাবেন।
* অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন- ডাল, চাল, দিয়াশলাই, শুকনো কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরাল স্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধক পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।
* গরু-ছাগল কাছের উঁচু বাঁধে অথবা কিল্লা বা উঁচুস্থানে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোনো উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।
* শক্ত গাছের সঙ্গে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখুন যাতে প্রবল ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আপনাকে উড়িয়ে নিতে না পারে।
* আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশেপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের আগেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়ে না যায়।
* রেডিওতে কিছু সময় পর পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনতে থাকুন।
* দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন।
* টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে যাতে করে দূষিত বা লবণাক্ত পানি টিউবওয়েলের ভেতর প্রবেশ না করতে পারে।
দুর্যোগ পরবর্তী করণীয়:
* রাস্তা-ঘাটের ওপর উপড়েপড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যাতে করে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।
* আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।
* অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকেপড়া মানুষ বা গবাদিপশুকে উদ্ধার করুন।
* ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে করে শুধুমাত্র এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজ উদ্যোগে অন্যকে সাহায্য করেন, সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।
* ত্রাণের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সচেষ্ট হন। ত্রাণের পরিবর্তে কাজ করুন। কাজের সুযোগ সৃষ্টি করুন। ত্রাণ যেন মানুষকে কর্মবিমুখ না করে কাজে উৎসাহী করে, সেভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে।
* দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকেপড়া মানুষ বা গবাদিপশু উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে উদ্ধার কাজ আরম্ভ করুন। কাদায় আটকেপড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাকে উদ্ধার কাজে সাহায্য করা যায়।
* ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার আশঙ্কা বেশি থাকে।
* পুকুর বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।
* নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বণ্টন (আলাদা লাইনে) করুন।
* দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাকসব্জির জন্য জমি প্রস্তুত করুন, বীজ সংগ্রহ করুন এবং কৃষি কাজ শুরু করুন যাতে করে দ্রুত ফসল ঘরে আসে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন