আমাদের চেনা শহরটা প্রতিদিনই একটু একটু করে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ বায়ুদূষণ। প্রকৃতি ক্রমাগত হয়ে উঠছে রূঢ়, কর্কশ, প্রাণহীন। চার দেয়ালে মোড়ানো এই প্রস্তর-কঠিন নগরে আদতে প্রকৃতি বলে যেন কিছুই নেই। মানুষ একমুঠো সবুজের ছোঁয়া পায় না। না আছে বৃক্ষ না আছে ছায়ার শীতলতা। আর তাতে করে প্রতিদিন বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছেই।
বায়ুদূষণের কারণে নানা ধরনের রোগবালাইও বাড়ছে। বিশেষ করে চোখ ও শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের আবাসস্থল, ঘর-বাড়ি বা অফিসকে আমরা নিরাপদ জায়গা মনে করি। সে জায়গাগুলোতেও বায়ুদূষণ তীব্রতর হচ্ছে। চারপাশের বাতাস দূষিত হলে ঘরের বাতাসে কি আর বিশুদ্ধতা থাকে! আর সেই দূষিত বায়ুর সঙ্গে প্রচুর ধুলিকণাও জমছে অন্দরে।
আমরা বাইরের বায়ুদূষণ নিয়ে মাথা ঘামালেও, ঘরের বায়ুদূষণের বিষয়টি চিন্তাই করি না। গৃহস্থালির দূষণও আমাদের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য ঘরের বায়ুদূষণ ক্ষতিকর। রান্না ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে বায়ু দূষণ হয়। এছাড়াও আমাদের ঘরের সিলিং, ডিসটেম্পার, ওয়ালের রং থেকে ছোট ছোট ধুলিকণা এসে বাতাসকে দূষিত করছে।
তাবৎ দুনিয়া জুড়েই যখন এই হাপিত্যেশ দশা তখন মানুষ নিজে থেকেই একটু সবুজের সান্নিধ্য পেতে মরিয়া হয়ে উঠছে। মানুষ ঘরের বায়ুদূষণ কমাতে আশ্রয় নিচ্ছে এয়ার পিউরিফিকেশনের। তবে আমাদের দেশে এখনও এয়ার পিউরিফিকেশনের মেশিন চোখে পড়ে না। এগুলো অনেক এক্সপেন্সিভ। তারপরও একটু বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে আমরা চাইলে নেচারাল পদ্ধতিতে ঘরের বায়ুদূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এই পদ্ধতির একটি হলো ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’। এক্ষেত্রে বেগোনিয়া, এয়ার প্লান্ট, পনিটেইল পাম, জেব্রা ক্যাকটাস, স্পাইডার প্ল্যান্ট জাতীয় গাছগুলো হতে পারে উৎকৃষ্ট উপায়।
এ বিষয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ইনডোর প্ল্যান্ট হচ্ছে ঘরের ভিতর গাছ লাগানো। আমরা যদি ঘরের ভেতরে টবে গাছ লাগাই তাহলে আমাদের ঘরের ভেতরের বায়ুর দূষণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিশেষ করে এরেকা পাম গাছ, মানি প্লান্ট, স্পাইডার প্লান্ট ইত্যদি জাতীয় গাছগুলো ঘরে থাকলে ঘরের বাতাস তুলনামূলক বিশুদ্ধ থাকে। যে গাছগুলো আমাদের ঘর থেকে পাটিকুলেট, গ্যাসিয়াস, ক্যামিকাল তিন ধরনের দুষণ নিয়ন্ত্রণ করবে। কিছু কিছু গাছ আবার কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মোনো-অক্সাইডসহ বিভিন্ন পলুটেন অবজারভার করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘একটা স্পাইডার প্ল্যান্ট গাছ প্রায় ২ শ স্কোয়ার ফিটের মত একটি ঘরের বায়ু পিউরিফাই করতে পারে। যে ঘর পিউরিফাই করতে ৬০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার একটা মেশিন কিনতে হয়। এ ধরনের দেশীয় প্রজাতির তিন থেকে চারটি গাছ ঘরে রাখলে সেই কাজ হয়ে যায়। বায়ুও থাকে দূষণমুক্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সকলে পরিবেশ সচেতন। বাঁচার তাগিদেই মানুষ পরিবেশ সচেতন হচ্ছে। সবাই একটু প্রাকৃতিক স্পর্শ পেতে চায়। নেচারাল টার্চ পেলে আনন্দ উপভোগ করে। সেজন্য দেখা যাচ্ছে অনেকেই বাসার ড্রয়িং রুম, বারান্দা বা খোলা জায়গায় গাছ লাগাচ্ছে, এতে করে তার মনের আনন্দ মিটছে। পাশাপাশি ঘরের শোভা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইনডোর প্ল্যান্টের মাধ্যমে ঘরের অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। বাসা-বাড়িতে একস্ট্রা কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের বাসা বাড়িগুলোতে প্রচুর ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে। ঘরের বায়ু পিউরিফিকেশন করার ক্ষেত্রে উদ্ভিদবিদদের পরামর্শ নিয়ে ঘরের ভেতর গাছ লাগানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এ গাছগুলো যেকোনও জায়গায় রাখা যায়। ফ্লোরে, টেবিলে, ওয়ার্ডড্রপের ওপরেও রাখা যায়। গাছগুলোকে দুই সপ্তাহ পরপর বারান্দায় রাখলে তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় রসদ সূর্যের আলো থেকে পাবে। কিছু কিছু গাছ আছে মাটিরও প্রয়োজন হয় না। শুধু পানিতে বাড়ে। এগুলো রোদেও নিতে হবে না। ঘরের যেকোনোও স্থানে রাখলেই বেঁচে থাকে ও বেড়ে উঠে।’
নগরজীবনে একটু স্বস্তির নাম যদি হয় বিশুদ্ধ বাতাস, প্রাণভরে এক দণ্ড নিঃশ্বাস নেয়া তবে এই ইনডোর প্ল্যান্টের উত্তম বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। ঢাকার মতো দূষণ আক্রান্ত মহানগরীতে একটু বিশুদ্ধ বাতাস মানুষের জীবনকে আরও আনন্দ ও সুস্বাস্থ্যময় করে তুলতে পারে। অতএব ঘরেই গাছ লাগান, প্রকৃতির পাশে থাকুন, যতটা সম্ভব দূষণমুক্ত জীবন যাপন করুন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন