ভর্তি পরীক্ষার প্রথমদিনেই ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের সংঘর্ষ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের গুচ্ছভিত্তিক ‘বি’ ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষা শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয় এবং তা ঘণ্টাখানেক চলে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয় বলে জানা গেছে।
খবর পেয়ে পাবনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার ছিল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথমবর্ষের গুচ্ছভিত্তিক ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাবনায় আসেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবক। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ভর্তিপরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে মোটরসাইকেল রাখা নিয়ে ছাত্রলীগকর্মী নাজমুল ও প্রান্তর মধ্যে কথাকাটাকাটি এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। ওই কথাকাটাকাটির সময় সভাপতির অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের গায়ে হাত তোলেন। এ নিয়ে দুইগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকতে।
এরই জেরে পরীক্ষা শেষ হলে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দুইগ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে। দুইগ্রুপই সংঘর্ষে লোহার রড, জিআই পাইপ, হকিস্টিকসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে। এতে উভয়গ্রুপের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন মেহেদী, সালমান, নাইমুর নাহিদ, ওমর ফারুক, শোয়াইব, মাহবুব, আছির উদ্দিন, রাসেল হাসান, শাহজালাল, মোজাহিদ, অনিক, ফাহাদ, রাব্বি ও সোহাগ।
এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল হোসেন বলেন, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের মধ্যে মোটরসাইকেলের ধাক্কাধাক্কি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে মোটরসাইকেল রাখা নিয়ে ঝামেলা হয়। তার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। হামলায় আহতদের বেশিরভাগই সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল্লাহ গ্রুপের সমর্থক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার দিনে ছাত্রলীগের মারামারি করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
তবে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গেটের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীর মধ্যে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিল। এ ঘটনায় যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে সবাই সাধারণ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় যদি ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সাধারণ শিক্ষার্থী জড়িত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বলেন, পাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের কোনো গ্রুপিং নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একসঙ্গে সব কাজ সম্পাদন করে আসছি। ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমরা জয় বাংলা বাইক সার্ভিস চালু করেছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেলে কাউকে রেখে আসাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, পুলিশের অভিযানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন