রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী লাল ইটের স্থাপত্যে ঘেরা কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সুনামের সঙ্গে দণ্ডায়মান এ কলেজটির প্রতিষ্ঠালগ্নে নাম ছিল মহসিনিয়া মাদ্রাসা। ১৯৭২ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ হিসেবে নামকরণে পরিচিতি পায়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও ইতিহাসের সাক্ষী কলেজটিতে লাগেনি আধুনিকতার কোনও ছোঁয়া। শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় টয়লেট, যা নেই পর্যাপ্ত। যা আছে, তা-ও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। তা ছাড়াও নেই কোনও স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা।
ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, কলেজটিতে একাদশ, দ্বাদশ, স্মাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বর্তমানে প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বিভাগভিত্তিক শিক্ষকদের জন্য আলাদা শৌচাগার থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য শৌচাগার আছে কেবল ১৫টি, যা সব সময় নোংরা ও অপরিষ্কার থাকে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের একটি টয়লেটেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান-টিস্যু কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন ও অপরিষ্কার এই টয়লেটগুলোতে স্যানিটাইজেশনের বিন্দুমাত্র বালাই ছিলও না। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুদেব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই কলেজের টয়লেটের মতো নোংরা ও জঘন্য টয়লেট বাংলাদেশের আর কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোধ হয় নেই। টয়লেটগুলোতে নেই স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা। ওয়াশরুম ব্যবহার শেষে হাত ধোয়ার জন্য সাবান বা কোনও ধরনের হ্যান্ডওয়াশ নেই, টিস্যু নেই। সপ্তাহ নয়, মাসেও টয়লেটগুলো পরিষ্কার করা হয় না। তা ছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী অনুপাতে শৌচাগারও নেই। পরীক্ষার সময় অন্যান্য কলেজ থেকে যেসব শিক্ষার্থী এই কলেজে পরীক্ষা দিতে আসে, তারা বেশির ভাগই এই কলেজের টয়লেট ব্যবহার না করে বাইরের পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করে। কলেজের টয়লেট ও স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা দুটো নিয়েই চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই শিক্ষার্থী।
কলেজের সি-ভবনের অবস্থা আরও করুণ। এখানের টয়লেটের স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা। ওয়াশরুমে টিস্যু নেই, সাবান নেই; পানির কল ঠিক নেই। পুরো টয়লেটের নোংরা ও জঘন্য অবস্থা।
কলেজের শিক্ষার্থী তাওহীদ আদনান বলেন, ‘আসলে শুধু কলেজ প্রশাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যারা টয়লেট ব্যবহার করে, তারাও যদি কাজ শেষে ঠিকমতো পরিষ্কার করে রাখতো, তাহলে টয়লেটের এমন বাজে অবস্থা হতো না। তবে প্রতিটি টয়লেটে টিস্যু ও সাবানের খুব দরকার। কলেজ কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় ন্যূনতম এই সুবিধাটুকু নিশ্চিত করা জরুরি।’
কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘রাতের বেলায় বাইরের লোকজন কলেজের আঙিনায় প্রস্রাব করে। ফলে দিনের বেলায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। কলেজের কোথাও বসলে খুবই উৎকট গন্ধ নাকে লাগে। প্রতিটি বিভাগে আলাদা শিক্ষার্থীর জন্য শৌচাগার না থাকায় নারী শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে শিক্ষকদের শৌচাগার ব্যবহার করে। পুরো ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষকদের ব্যবহৃত টয়লেটগুলো কর্মচারীরা নিয়মিত পরিষ্কার রাখে। ফলে সেগুলো ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবে সেখানেও স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা ভালো না।’
কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি এই কলেজে আসার পর সর্বপ্রথম কলেজের পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শৌচাগারে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি। আগের তুলনায় এখনকার অবস্থা মোটামুটি ভালো। শিক্ষার্থীরা যদি সচেতনভাবে এসব ব্যবহার করে, তাহলে শৌচাগার নোংরা কম হয়। শিক্ষার্থী অনুপাতে যদিও কলেজে শৌচাগার কম, তবু আমার নতুন আরও কয়েকটি শৌচাগারের ব্যবস্থা করছি। মূলত জায়গা স্বল্পতার কারণে নতুন করে কিছু করতে পারছি না। আমি দায়িত্বরত সবাইকে তাদের কাজ ঠিকমতো করার নির্দেশনা দিয়েছি এবং নিজেও তা তদারকি করি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন