জঙ্গি ছাত্রলীগ কখনো হেলমেট বাহিনী দিয়ে এবং কখনো প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ দমনে মাঠে নামে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে ধর্ষণেও পিছিয়ে নেই শেখ হাসিনার এই জঙ্গি ছাত্র সংগঠন। সরকারি আশ্রয়ে এবং প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাতে প্রক্টরের কার্যালয়ে ঘেরাও করে সাধারণ ছাত্রীরা। বিচারের আশ্বাস দিয়ে ছাত্রীদের সেদিন প্রক্টরের বাসার সামনে থেকে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুইজন সক্রিয় কর্মীসহ চারজনকে অবশেষে আটক করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এদের মধ্যে একজন বহিরাগত। আটক জঙ্গি ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছ থেকে ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-৭ হাটহাজারী কোম্পানি কমান্ডার মাহফুজুর রহমান শনিবার (২৩ জুলাই) চারজনকে আটক করার খবরটা স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেন।
শুক্রবার রাতে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদেরকে আটক করে র্যাব।
জানা গেছে, আটক চারজনের মধ্যে তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। বাকি একজন (বহিরাগত) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আটকেরা হলেন- মেহেদী হাসান ওরফে হৃদয়, আজিম হুসেন, বাবু ও বহিরাগত শাওন। এদের মধ্যে মেহেদী ও আজিম ছাত্রলীগের কর্মী। মেহেদী ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ ও আজিম ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত মেহেদী ও আজিম ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, মেহেদী ও আজিম দুজনই জুনিয়র ও ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
অথচ যৌন হয়রানির পর ছাত্রলীগের এই কর্মীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ দিতে গেলে রেজাউল হকই বাধা দিয়েছিলেন। রেজাউল হকের বাধার কারণে ওই ছাত্রী সেদিন প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিতে পারেন নি। পরবর্তীতে সাধারণ ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে দুই দিন পর প্রক্টর বরাবর অভিযোগ পেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ই জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। ছাত্রীর সঙ্গে থাকা তাঁর বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাঁকেও বেধড়ক মারধর করে ওই তরুণেরা।
এসময় ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই খবর ছাত্রীদের হলে ছড়িয়ে পড়লে ২০ জুলাই রাতে ছাত্রীরা প্রক্টরের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করে। দুই দিন ব্যাপী দফায় দফায় ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রলীগের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হন।
সাধারণ ছাত্রীদের চাপে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চিহ্নিতদের আটক করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে শনিবার প্রথম প্রহরে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশের সহযোগীতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া।
অভিযান চালানোর আগে ছাত্রীদের বিক্ষোভের পর গত মঙ্গলবার প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। এর এক দিন পর বুধবার হাটহাজারী থানায় মামলা করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রসঙ্গত, সাধারণ ছাত্রীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ না করলে ছাত্রলীগের এই জঙ্গিরা পার পেয়ে যেতেন। সাধারণ ছাত্রীদের বিক্ষোভের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন। এখন দেখার বিষয় আওয়ামী আদালতে ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী বিচার পান, নাকি অদৃশ্য চাপে মামলা উঠিয়ে নিতে বা মামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন