শিক্ষাসংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হওয়া নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এসব কাজ ব্যাপকভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রীভূত কীভাবে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা বোঝাতে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্কুল খুলব পঞ্চগড়ে, ঢাকায় আসতে হবে মন্ত্রীর স্বাক্ষর লাগবে বলে! দুর্নীতি নিরসনের জন্য আমরা এটি বোর্ডের (শিক্ষা বোর্ড) কাছ থেকে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু খরচ কি কমেছে, নাকি বেড়েছে? বেড়েছে। সচিবালয়ে ঢুকতে যে কী কষ্ট, সেটি মন্ত্রীর পতাকা পাওয়ার আগপর্যন্ত আমারও কষ্টটা হতো।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘আমাদের শিক্ষা বাজেটের গতিপ্রকৃতি ও আগামীর প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে গিয়ে তদবির করে ফাইল তোলে...। প্রথমত একটি তদবির বোর্ড পর্যায়ে, তারপর সচিবালয় পর্যায়ে। এরপর (ফাইল) মন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত সেটি যেতে হবে। এই যে আমাদের অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত মডেল, এই মডেল থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। আমার মনে হয়, ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন আছে।’
দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় আর্থিক ও পারদর্শিতার বিষয়ে জবাবদিহি দরকার বলেও মনে করেন মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে শুধু আর্থিক প্রেক্ষাপট বেশি দেখছি। কিন্তু পারদর্শিতার পরিবীক্ষণে ঘাটতি আছে।’
গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল ইউনিসেফ ও ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী আরও বলেন, শিক্ষা খাতে আর্থিক বরাদ্দ একটি চ্যালেঞ্জ। তবে উপমন্ত্রী হিসেবে তাঁর তিন বছরের অভিজ্ঞতা হলো, বরাদ্দের যথাযথ বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। আর শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি চ্যালেঞ্জ হলো মানবসক্ষমতা। এখানে পরিবর্তন দরকার। এ জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বড় প্রয়োজন। শিক্ষার মান আরও বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, চলমান ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সংগত কারণেই ত্রাণ, পুনর্বাসন ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার ক্ষতির কথা তেমন আসছে না। বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয় প্লাবিত, না হয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর কথাও মাথায় রাখতে হবে। ম্যাপিং করে বন্যায় আক্রান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য বের করে এ বিষয়ে মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের গতি-প্রকৃতি তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, গত এক দশক ধরেই শিক্ষা খাতের বাজেট মোট দেশজ উৎপাদনের ৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার শিক্ষা খাতের বাজেটের আকার দেশের মোট বাজেটের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আর জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমান শিক্ষা খাতের বাজেট গতানুগতিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান, ইউনিসেফের প্রতিনিধি দীপা শংকর, শিক্ষকনেতা নুর মোহাম্মদ তালুকদার প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন