করোনাকালীন বন্ধের পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলগুলো খুলতে না খুলতেই সিট দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৈধভাবে সিটে থাকা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ না হতেই তাঁদের সিটগুলো দখলে নিতে বেপরোয়া তাঁরা। অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে সিটগুলোতে নিজেদের অনুসারীদের তুলতে তৎপর একাধিক পক্ষ। তারা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকা ও গবেষণারত শিক্ষার্থীদের কক্ষে আগেভাগেই মালপত্র রাখাসহ নানাভাবে সিট দখলে নিচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসজীবনের শেষ প্রান্তে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের। অনেকে লজ্জায় কাউকে না জানিয়ে গোপনে দ্রুত ক্যাম্পাস ছাড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে অবস্থানরত স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি রিপনের সিট দখলে নিতে মালপত্রসহ এক জুনিয়রকে পাঠায় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। বিষয়টি জানার পর ওই সিট নিতে আরেকটি পক্ষও তৎপর হয়ে ওঠে। এ নিয়ে দুই পক্ষ বাগবিতণ্ডা ও হট্টগোলে জড়ায়।
ওই আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাস থেকে রুমে এসে দেখি আমার সিটে ওঠার জন্য এক জুনিয়র মালামাল নিয়ে এসেছে। পরে আমার উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। শিক্ষাজীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে—এটি ভাবিনি।’
শেখ রাসেল হলের ১১২ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী ওলীউল্লাহ বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে থাকতেই আমার সিটে ওঠানোর জন্য ছাত্রলীগ নেতারা এক জুনিয়রকে পাঠিয়েছে। পাশের সিটের শিক্ষার্থী বাড়ি যাওয়ায় আপাতত সে সেই সিটে আছে। ক্যাম্পাস থেকে এ রকম বিদায় আশা করিনি।’
জানা যায়, হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতারা সিটগুলো দখলে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আবাসিকতার বিধানের কোনো তোয়াক্কা করছেন না তাঁরা। একটি হলের বেশ কয়েকটি চার সিটের কক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও পদপ্রত্যাশী নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘আমি অনেকগুলো বিষয় জানি না। তবে যেগুলো জেনেছি সেগুলো সমাধান করেছি। অন্য ঘটনাগুলোর খোঁজ নেব। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা একটা ভালো পরিবেশে ক্যাম্পাস থেকে যাবে, এটাই কাম্য। কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে যে ঘটনাগুলো ঘটছে এগুলো অমানবিক।’
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আমরা অনেক কিছু বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক কিছুতেই হল প্রশাসনের কিছু করার থাকে না। আমরা কিছু বললে ছাত্রলীগ নেতারা হলে তালা দিয়ে প্রক্টরকে ফোন দেয়, প্রক্টর এসে সমঝোতা করে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন