শাহবাগের বিক্ষোভ থেকে আটক করা হয় শিক্ষার্থীদের। ছবি: রুবেল রশিদ।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারও ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরীক্ষার দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন।
আমাদের চবি প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন বিভাগের চলমান পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। শাটল ট্রেন চালু না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থারও দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেয় শিক্ষর্থীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। শুধু পরীক্ষার জন্য অনেকে মেস ভাড়া নিয়ে থাকছে, এখন বলা হচ্ছে পরীক্ষা হবে না। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই।
তারা দাবি করেন, পরীক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খোলা এবং শাটল ট্রেন চালু না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। ক্লাস এবং পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি জীবনেও তার প্রভাব পড়বে।
শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ইস্যুতে স্বাধীন মত পোষণ করার এখতিয়ার রাখে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের বিষয়টি মাথায় রেখে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক মত পোষণ করলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী বেশ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে সরকারি একটি সিদ্ধান্ত এসেছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করছে।
আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিভাগের চলমান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।
দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানের আশ্বাসে রবিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তমালিকা হক বলেন, ‘২০১৯ সালের অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্স পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নি। জানুয়ারিতে প্রশাসনের নির্দেশে দীর্ঘদিন বন্ধের পর পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ আসে। আবাসিক হল না খুলেই চলমান পরীক্ষাগুলো নেয়ার দাবি জানাই। পরীক্ষা শেষ হওয়া আমাদের জন্য জরুরি।’
অপর দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করতে আসা কয়েক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মুক্তিসহ পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশের দাবিতে বিভিন্ন সরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিয়েছেন।
চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ এবং পুলিশের হাতে আটক শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে জয় বাংলা ভাস্কর্যে বিক্ষোভ শুরু করে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারনে বাধাগ্রস্থ হয় ২০২১ সালের কর্মচারী সমিতির নির্বাচন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। দাবি না মানলে প্রশাসনের পদত্যাগের দাবি জানানো হয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অবস্থান থেকে।
এর আগে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও হল খুলে দেওয়া ও পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরীক্ষার মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাদের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর বৃস্পতিবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি থেকে আলটিমেটাম দিয়ে দিনের বিক্ষোভ শেষ হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন