খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের শাস্তি হিসেবে তিন শিক্ষক ও দুই ছাত্র বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে এটা খুব ন্যক্কারজনক। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশটা এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, উঁচু উঁচু চেয়ারে খুব নিচু মানের মানুষরা বসে আছে। এমন সব পদে এমন সব মানুষ আসীন হয়েছে; আসলে ওই সমস্ত পদ হোল্ড করার জন্য যে ধ্যানধারণা বা প্রজ্ঞার দরকার সেগুলো তাদের নেই। এর দায় আমরা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। আপনি যদি ভিন্নমতের লালন না করতে পারেন, আপনি যদি নতুন ধরনের কথাবার্তা না সহ্য করতে পারেন। এ জিনিসগুলো আপনাকে একদিন পচিয়ে ছাড়বে।’
এ সময়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সামান্য অংশই ক্লাস-পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত। বাকিটুকু টি-স্টল, আড্ডা, পাঠচক্র, লেখালেখিতে। বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবেই শিক্ষার চর্চা করা হয়। সেখানে ভিন্নমতের মূল্যায়ন করা হয়। খুবিতে যৌক্তিক কিছু কারণকে কেন্দ্র করে কিছু শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে দাঁড়িয়েছিল। তাদের দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করায় তিন শিক্ষককে বহিষ্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জঘন্য একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুবি প্রশাসন। আশা করি তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে সে অবস্থান থেকে ফিরে আসবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাসিব রনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন গণতন্ত্রের কথা হয় না, ন্যায্য কথা হয় না। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ন্যায়ের প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন তখন তিনিও বহিষ্কার হয়েছিলেন। খুবিতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা খুবিতে শিক্ষক ও ছাত্র বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাই’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম. এ. বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল মৃধার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম কনক ও ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন প্রমুখ। এ ছাড়া মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন-ফি কমানো, আবাসন সংকট সমাধান, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী । শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন তিন শিক্ষক। এর জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দুই ও ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষককে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ এনে সিন্ডিকেট সভা বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করে প্রশাসন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন