চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সেশনজট নিরসনসহ চার দাবি রাজধানীর শাহবাগের মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভরত মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। আজ রবিবার (৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এই অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কিও হয়। পুলিশ-শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কি চলাকালীন মুহূর্তের বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের টানাহেঁচড়া করছে। এসব ছবিতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়কে দেখা গেছে।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রফ পরীক্ষা না নেওয়া, সেশনজট নিরসন করে যথাসময়ে কোর্স সম্পন্ন করার ব্যবস্থা, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬০ মাসের বেশি বেতন না নেওয়া ও মহামারীর সময় পরীক্ষা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হলে দায়ভার কর্তৃপক্ষকে নেওয়ায় দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
এপ্রোন ধরে এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
এদিকে পুলিশ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের এসব ছবি শেয়ার করে অনেকে অনেক পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আহমেদ খান শোভন নামে একজন ব্যবহারকারী ‘পেছন থেকে পুলিশ একজন ছাত্রীর এপ্রোন ধরে রেখেছেন’ এমন একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, একটা মেয়ের গায়ে কীভাবে একজন পুলিশ এভাবে হাত দেয়?
তিনি লিখেন, আর যে কোন আন্দোলনের উপর পুলিশ কেন এত চড়াও হয়? আমার জানা মতে তারা কোন ভাঙচুর করে নাই, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের এত সমস্যা কিসে? আমি জানি পুলিশ একা একাই চলে আসে না এখানে। এর পেছনে কারা যে মেডিকেলের স্টুডেন্ট স্বার্থ বুঝতেছে না এর তিব্র নিন্দা জানাই।
এক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে পুলিশ
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সমর্থক ফেসবুক পেজ ‘সাদা এপ্রোন’ ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছে, ছোট ভাই-বোনদের উপর পুলিশি নির্যাতন। মেয়েদের গায়ে পুলিশের হাত আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। ক্লান্তি আসলেও পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখতো যে সাদা এপ্রোনের স্বপ্ন, তার অমর্যাদা আমায় কষ্ট দিচ্ছে।
তারা লিখেছেন, কষ্ট দিচ্ছে স্বাধীন দেশে পুলিশের ভংয়কর রুপ আর সেচ্ছাচারিতা। কষ্ট দিচ্ছে মেডিকেল শিক্ষাব্যাবস্থার নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর অবহেলা। গলা উঁচিয়ে এখন একটা কথাই বলতে চাই- কলার চেপে ধরা, নারীর গায়ে হাত দেয়া, পিটিয়ে এপ্রোনে দাগ ফেলার অধিকার তোদের কে দিলো? অবিলম্বে শিক্ষার্থী নির্যাতন ও লাঞ্চনাকারীদের বিচার করতে হবে।
আরেক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
মাহবুবা আফরিন দিবা নামে এক মেডিকেল শিক্ষার্থী ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, একজন পুরুষ কীভাবে একজন মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুলে? সে আমার বাবা নাকি ভাই? আমার বাবা কিংবা ভাই হলেও এই বয়সে সে আমার গায়ে এভাবে হাত রাখতে শত-হাজার বার ভাববে। তাহলে পুলিশ কীভাবে এতো সাহস পায়? শুধু এই প্রশ্নের উত্তর চাই।
শাহবাগ আন্দোলনে অংশ নেয়া শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ফারিয়া আফরোজ চৈতি নামে এক ভুক্তভোগী ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দিপ্তি নামের একজন (পুলিশ কনস্টেবল হবে) আমাকে লাঠিচার্জ করার হুমকি দেন। এর আগে তিনি আমার সামনের কিছু আপুকেও মারধর করেছেন।
চৈতি বলেন, পুরোটা বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আসলে ওনি আমার সঙ্গে সবচেয়ে জঘন্য যেটা করেছেন, তিনি আমার এপ্রোন ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেছেন। এতে আমার এপ্রোন ছিড়েও যায়। আমার দুই হাতে আঘাত করতে করতে তিনি বলেন- তিনি এই এপ্রোন খুলে ফেলবেন! আমি এটা দীর্ঘক্ষণ ধরে হজম করেছিলাম। শুধুমাত্র ওনার চাকরিতে প্রভাব ফেলতে চাইনি বলে। কারণ, আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্যের মধ্যে এটা ছিলো না। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
বিষয়টি নিয়ে নিন্দা জানিয়েছে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীও। তারা বলছে, পুলিশের এরকম আচরণ কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানার দোষী পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি চিকিৎসকদের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চিকিৎসা অনুষদের ডিনসহ পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার অপসারনের দাবি করা হয়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ নয় ববং শিক্ষার্থীরাই পুলিশের উপর চড়াও হয়েছে। তারা বলছেন, এখানে হাজার হাজার মুমূর্ষু রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। তাদের কথা চিন্তা করে এবং দুর্ভোগ কাটাতে আমরা তাদেরকে বারবার অনুরোধ করেছি। তারপরও তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে তাদেরকে অনুনয়-বিনয় করে তাদের উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক আরিফুর রহমান জানান, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে বসে পড়েছে। এ কারণে যানজট তৈরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত সপ্তাহে চার দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। গেল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের সাথে বৈঠক করেন তারা। সেখানে সমাধান না হলে মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা বিভাগের পরিচালকের সাতদিনের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন