কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মেধা তালিকা নিয়ে সিরিয়াল জালিয়াতি, পরীক্ষার মারকাজ নিয়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, স্বজন-প্রীতি, মুরব্বি আলেমদের নামে তুচ্ছ-তাচ্ছিল এবং সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তিনি বরখাস্ত হতে পারেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক বেফাক নেতৃবৃন্দের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর মাওলানা আবু ইউসুফের অনিয়মের খবর আসতে থাকে চারিদিক থেকে। চাপের মুখে পড়ে তিনি বেফাক মহাপরিচালকের কাছে অনির্দিষ্টকালের ছুটিও চেয়েছিলেন। এমনকি বেফাক মহাসচিবও তার পক্ষে সুপারিশ করেন বলে জানা গেছে। তবে মহাপরিচালক তা মঞ্জুর করেননি।
সাম্প্রতিক ফোনালাপ বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার বেফাকের খাস কমিটির মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আবু ইউসুফসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
মাওলানা আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে অনেক আগ থেকেই একটি সাব কমিটি তদন্ত করছে। অবশ্য বেফাকের সব অনিয়মের বিরুদ্ধেই কাজ করছে ১০ সদস্যের এই কমিটি। তদন্ত কমিটিতে আছেন-মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা নুরুল আমিন, মাওলানা মনিরুজ্জামান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, বরাবরই তদন্ত কমিটির কাজ ব্যাহত করা হয়েছে। যথানিয়মে তদন্ত আগাতে দেয়া হয়নি। জানা গেছে, এ যাবৎ তদন্ত কমিটির মাত্র দুটি মিটিং হয়েছে। তারা বেফাকের সকল বিভাগের অনিয়মের তদন্ত করছেন। বিশেষ করে-প্রকাশনা বিভাগ, পরিদর্শন বিভাগ, পরীক্ষা বিভাগ এবং হিসাব বিভাগের অনিয়ম খোঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
বেশ কিছু অভিযোগের কারণেই মাঠে নেমেছ এই তদন্ত কমিটি। অভিযোগগুলো হচ্ছে-প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার কাগজ কেনায় অনিয়ম, প্রকাশনা বিভাগে স্বজন- প্রীতি ইত্যাদি।
তদন্ত কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য আওয়ার ইসলামকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যথাযথভাবে তদন্ত করেতে পারিনি। সঠিক তদন্ত হলে ঘটনা এ পর্যন্ত গড়াতো না।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফসহ অভিযুক্তদের কী শাস্তি হতে পারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেছেন, একা কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারবো না। তবে আগামীকাল (১৪ জুলাই) মঙ্গলবার বেফাকের খাস কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফকে বরখাস্তসহ যেকোনো কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বেফাক সূত্র জানিয়েছে, মাওলানা আবু ইউসুফ গতকাল রাতে অফিস থেকে চলে যান। অনেকে ধারণা করেছিল, তিনি আর ফিরবেন না। তবে সোমবার তিনি অফিস করেছেন। আগামীকালের মিটিংয়ে তাকে ডাকা হতে পারে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফোনালাপ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এসব ফোনালাপসহ এ পর্যন্ত বেফাকে হওয়া সব অনিয়মের বিচার দাবি করেছেন কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা।
তাদের দাবি, শুধু আবু ইউসুফ নয়, মহাসচিবসহ যারা নানা অপকর্মে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বেফাককে একটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন