সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে 'কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস' দেয়ার অভিযোগ এনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮' এ মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম মাহির চৌধুরী। তিনি অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অকিল উদ্দিন মামলা নথিভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলা নম্বর-৫।
জানা যায়, গত শনিবার (১৩ জুন) সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর তাঁকে উদ্দেশ্য করে মাহির চৌধুরী তার ফেসবুক একাউন্টের একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেন, “জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে তিনি। বাকি জাতীয় নেতাদের উত্তরসুরীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত তিনি। আওয়ামীলীগ যখন রাস্তায় মাইর খাইতো তখন সব জায়গায় এ লোককে দেখা যাইতো। রাজপথ কাপানো নেতাদের মধ্যে তিনি আছেন। আবার ২০০২ সালে দুদকের মামলা এবং ২০০৮ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের ‘পকেট কাপানো’ নেতাদের মধ্যেও তিনি আছেন। ২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়ও তিনি ছিলেন। এই লোক নিয়ে আসলে বলতে গেলে ব্যাঙ হয়ে যেতে হয়। বিম্পির কোন এক নেতা জানি একবার বলছিলো ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে’। মোহাম্মদ নাসিম ভালো থাকবেন ঐপারে!”
স্ট্যাটাসটি দেয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি তার ওয়াল থেকে এটি মুছে (ডিলিট) ফেলেন এবং এর জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাও প্রার্থনা করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই স্ট্যাটাসটির সমালোচনা করে তার শাস্তি দাবি করেন। এরপর আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮' এ মামলা দায়ের করে।
মামলার ব্যাপারে রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, কেউ না কেউ কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছে বিষয়টি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। যখন বিষয়টা ফেসবুকে আসছে তখন অনেকে তার উপর বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা বলেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন।
যদি কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কারো জানমালের ক্ষতি করেন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী কিছু করে থাকেন শুধুমাত্র তখনই বিশ্ববিদ্যালয় কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার রাখে ।
মাহিরের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ব্যঙ্গাত্মক। তবে তা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী নয়। তবুও কেন এ মামলা, প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।
এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, সে একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে মান ক্ষুন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া মানে রাষ্ট্রের মান হানি হওয়া। আর এ ছেলের বিরুদ্ধে আরো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন