পবিত্র ঈদুল ফিতর এবার এলো ভিন্নভাবে। আগের মত উৎসব উৎসব ভাব নেই। আছে সুস্থভাবে, বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা। কারণ, মহামারী কোভিড-১৯। এই সময়ে সব থেকে কষ্টে আছেন দরিদ্র, নিম্ন মধ্যম আয়ের পরিবার। কোনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি কাজ না পেয়ে দিশে হারাচ্ছেন। কোনো পরিবারের আগামী কিছুদিনের আয়ের উৎস কি হবে, তা অজানা। ঠিক এমন দুঃসময়ে নৈতিকভাবে ২৩৮টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশ ও প্রবাসের সজ্জন কিছু ব্যক্তি। করোনার এই অন্ধকার সময়ে পরিবারগুলোকে আশার আলো দেখিয়েছে "আমার দায়িত্বে থাকুক একটি পরিবার" নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
ত্রাণ কোনো স্থায়ী সমাধান নয় এই মহামারী-কালীন সময়ে, এই বিষয়টি বুঝতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলেন। কেমন হবে যদি এই পরিবারগুলোর জন্য করোনা মুক্তি পর্যন্ত স্থায়ী কোনো নির্ভরতা দেয়া যায়? সেই ভাবনা থেকেই "আমার দায়িত্বে থাকুক একটি পরিবার" ফেসবুক পেজটির সূচনা।
না, তারা সরাসরি সাহায্যপ্রার্থীর কাছে ত্রাণ দিয়ে আসেন না, বরং যিনি সাহায্য করতে ইচ্ছুক, তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন অভাবী পরিবারের। তারা যোগাযোগ করে, সরাসরি খাবার কিনে সাহায্য করতে পারেন, কিংবা টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচশ' টাকার একটি বন্দোবস্ত হলেই অভাবী পরিবারটি কষ্ট করে হলেও বেঁচে থাকতে পারবে।
এই প্লাটফর্ম এর অন্যতম উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মহসিন খন্দকার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, "এদেশে করোনা শুরু হবার পর থেকেই মানুষের মাঝে মানবিকতার বিষয়গুলো আরো বেশি দেখতে পাই। সরকারি, বেসরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানীয় সংগঠন, এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা সত্যিই আশার আলো দেখায়। কিন্তু বেশিরভাগ কার্যক্রম ই ত্রাণ ভিত্তিক হওয়ায় তা দিয়ে হয়ত কিছু পরিবার এর অল্প কিছুদিনের খাবার এর ব্যবস্থা হলেও বাকি সময় তাদের অনিশ্চয়তায় কাটাতে হয়। তাই আমরা একটু ভিন্নভাবে ভেবে এই প্লাটফর্মটি গড়ে তুলি যাতে আমরা অল্প সংখ্যক পরিবার নিয়ে কাজ করলেও তারা এই বিপদকালীন সময়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। "
অনেকেই এসব অভাবী পরিবারের সন্ধান দিচ্ছেন, অনেকে পরিবারগুলোর দুরবস্থায় স্বেচ্ছায় আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিম্ন আয়ের এই সাহায্যপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর সাথে সাহায্য-দাতাগোষ্ঠীর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে এই ফেসবুক পেজটি।
অনিশ্চিত এই সময়ে,দু' শতাধিক পরিবার পেয়েছে নিশ্চিন্ত নির্ভার অবলম্বন। শুধু তাই নয়, সংখ্যাটি আরো বাড়ছে। দরিদ্র পরিবারের পাশে নির্দ্বিধায় দাঁড়াচ্ছেন মানুষ।
অন্ধকার পেরোলেই মিলবে মুক্তি।যতদিন আলো আসেনি, ততোদিন চলুক মানুষের মানবধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের জয়গান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন