বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও।
বিশ্বজুড়ে চলা বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় রাখার পক্ষে মত দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে সরকারি নির্দেশনা না আসলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, সোমবার থেকে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ইতিহাস, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রবিবার থেকে ক্লাস বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বিভাগে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অনেক কম। তবে বেশ কিছু বিভাগে পরীক্ষা থাকায় উপস্থিতি ছিলেন পরীক্ষার্থীরা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী করোনা আতঙ্কে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটু ব্যতিক্রমী একটা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে যাতায়াত করে। আবাসিক হলগুলোও অস্বাস্থ্যকর। ফলে ঝুঁকি অনেক বেশি। আর বিশ্বের অনেক দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। গণপরিবহণে যাতায়াতের ঝুঁকিও আছে। তাই আমরা ক্লাস বর্জন করছি। বিভাগের সভাপতি স্যারকেও অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান খালেদ রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাসের আতঙ্কে রবিবার ক্লাস করতে আসেনি। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস নিয়ে অনেক আগ্রহী হলেও করোনাভাইরাসের আতঙ্কে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কিছু দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা যেতে পারে। তবে সেটা অব্যশই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়।
সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মো. শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনের বিষয়টি আমাকে লিখিত আকারে জানিয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিন্ধান্ত নেয়া যাবে না।
ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বকুল চন্দ্র চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনের বিষয়টি জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষের নোটিশ ছাড়া ক্লাস স্থগিত সম্ভব নয়।
এদিকে করোনাভাইরাস সতর্কতায় করণীয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১১ মার্চ লিখিতভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সতকর্তার অংশ হিসেবে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার পক্ষেও মত দিয়েছে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সতকর্তায় আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কথা বিবেচনা ১১ মার্চ প্রশাসনকে লিখিত পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে উপাচার্য ম্যাম না থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো সিন্ধান্ত আসেনি। আশা করি উপাচার্য ম্যাম ঢাকা থেকে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে পজেটিভ কোনো সিদ্ধান্ত পাব।
চবি শিক্ষক সমিতির সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কে তাদের সচেতন করতে ইতিমধ্যে আমরা নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও নানা পরামর্শ দিয়েছি। সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে একটা মিটিং আছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি আজ ছুটিতে রয়েছি, তাই ক্লাস বর্জনের বিষয়টি জানি না। আর উপাচার্য ম্যাম ঢাকায় ইউজিসির মিটিংয়ে গিয়েছেন। সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে বলতে পারছি না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন