শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের গণরুম। ৪ জনের এ রুমটিতে ঠাঁই হয়েছে প্রায় ৩০ জন ছাত্রের। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নতুন কিংবা সবে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠা শিক্ষার্থী। প্রতি রাতে বিছানায় যে কজন পারে গাদাগাদি করে ঘুমায় আর বাকিদের জায়গা হয় হলের মসজিদে।
এই গণরুমে গাদাগাদি করে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে তাদের বসবাস। এমন পরিস্থিতি তাদের যে কোনো ধরণের সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি হলের গণরুমে ২০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী এভাবেই আছে। দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ায় এভাবে তাদের বসবাস বেশ উদ্বেগের।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ২টি, শেরেবাংলা হলে ২টি এবং নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হলের ১টি গণরুমে ২০০ এরও বেশি শিক্ষার্থীর বসবাস। করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য বিস্তার রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার্থীরা সহজেই সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতির ঘাটতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ছেলেদের ৩টি হলে সরেজমিনে দেখা যায়, গণরুমগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দৃশ্যমান হয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ রোধে কর্তৃপক্ষের উচিত সব একাডেমিক কার্যক্রম এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের এক শিক্ষার্থী পূর্বপশ্চিমকে বলেন, এত মানুষ একসঙ্গে থাকায় এমন একটি রুমে স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় রাখা বেশ কঠিন কাজ। আবার রাতে এতজনের ভিড়ে এখানে ঘুমানো অনেক কষ্টের। মানুষ হিসেবে পর্যাপ্ত ওয়াশরুমেরও ব্যবস্থা নেই। যা আছে তাও অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে আবার নতুন এই ভাইরাস আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ।
সিরাজ-উদ-দৌলা হলের এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন, এ অবস্থায় আমরা সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। মা-বাবা বাড়িতে চলে যেতে বলছেন কিন্তু যেতে পারছি না ক্লাস-পরীক্ষা চলার কারণে।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হলের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এতে আক্রান্ত হয়েছিলো। এবার যদি কোনো শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন কাজ হবে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শেকৃবি কর্তৃপক্ষেরও উচিত নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা।
এদিকে শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও চলমান পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় ফেসবুক গ্রুপ ‘সাউ ফ্যামিলি’তে চলমান অনলাইন জরিপে জানা যায়, ৯৪ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ চায়। ওই জরিপে দুই ঘণ্টায় আট শত ৬২জন শিক্ষর্থী অংশগ্রহণ করে।
অপরদিকে কয়েকজন শিক্ষক চীন, কোরিয়া, নেদারল্যান্ড থেকে অতি সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তবে তারা কোয়ারেন্টাইন ছাড়াই তাদের নিয়মিত কাজ-কর্ম করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা আছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করাই সময়োপযোগী বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মিটিংয়ে বসেছি, মিটিং এ আমরা সিদ্ধান্ত নিব করোনা নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের করণীয় কি হবে।
শেকৃবির চীফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. খন্দকার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, করোনা ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে প্রশাসনের ভেবে দেখা উচিৎ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আলোচনা সাপেক্ষে রোববার (১৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
উপ উপাচার্য ড. মো. সেকেন্দার আলী এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান একই কথা বলেছেন।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন