ছাত্রলীগের একের পর এক অবরোধ আহ্বানের বিরুদ্ধে ‘কঠোর অবস্থানে’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। বিগত সময়ে শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা সংঘাত, অবরোধ ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে এমন সিন্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া আবাসিক হলে শৃঙ্খলা ফেরাতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হলে অবস্থানকারী সব অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট ছেড়ে দেওয়ার নিদের্শনাও দিয়েছে প্রশাসন।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাক্ষকে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব সিন্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অপরাধীদের দ্রুত বিচার, শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চবি প্রশাসন।
এর আগে দুপুর ২টায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে প্রক্টরিয়াল বডির সভা হয়।
পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।
সেখানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হচ্ছে জানিয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করে। তবুও যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ব্যাপারে ছাত্রদের সঙ্গে কোনো সংঘাত হয়নি। তাদের (ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের) নিজেদের কারণে এগুলো হচ্ছে। আমার ইচ্ছে ছিল শুধু ছাত্র নয় কর্মচারি, কর্মকর্তা কারো বিরুদ্ধে কোনো নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেব না। আমরা চেয়েছিলাম, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে। তবে গত কয়েকটি ঘটনায় আমরা ছাত্রদের আচরণে মর্মাহত হয়েছি। আমরা এখন শক্ত অবস্থানে যাব’।
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্ররা যদি শান্ত না থাকে, নেতার সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে না পারে, তবে উন্নয়ন তো হবে না। সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। ওপর থেকে আমাদের কাছে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার জন্য। তাই সবার দাবির প্রেক্ষিতে আমরা কঠোর ব্যবস্থায় যাচ্ছি’।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নসির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। আমরা ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আজকে কথা বলেছি তারা (ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা) চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের সঙ্গে আছে জানিয়ে সাতটি দাবি রেখেছে। সেগুলো হলেঅ- কোনো ঘটনার পর পুলিশ অ্যাকশনের ব্যবস্থা করা, বিবদমান দুই গ্রুপ থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার, প্রয়োজনে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন, তদন্তে যারা দায়ী থাকবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া, ফেসবুকে যেসব ছাত্র উস্কানিমূলক পোস্ট দেয় তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া, কথায় কথায় যে অবরোধ ডাকা হয়, এ ধরনের অবরোধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। সবাই মতামত দিয়েছে গুটিকয়েক ছাত্রের জন্য ২৫ হাজার শিক্ষার্থী কেন ভোগান্তিতে পড়বে। আমরা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে এসব বিষয়ে কঠোরভাবে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব’।
এ সময় তারা আরো বলেন, ‘আগে সবাই চাইত মামলা, শাস্তি না হোক তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় সবাই শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিগত একদুই মাস যাবত অনাকাক্সিখত ঘটনাগুলোর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আবাসিক হলে অছাত্র, বহিরাগত, অ্যালটবিহীন কেউ হলে অবস্থান করতে পারবে না। প্রক্টর প্রভোস্টদের কাছে তালিকা চেয়েছেন এক সাপ্তহের মধ্যে। ছাত্র সংগঠনের সবার দাবি মাদকের সঙ্গে কোনো ছাত্র, কর্মচারী, কর্মকতা ও যদি শিক্ষকও জড়িত থাকে সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
এ সময় চবি প্রক্টর অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে যেসব সিন্ধান্ত এসেছে, আমরা বলেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করব। তারাও আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। হলগুলো অনেকগুলো অব্যবস্থাপনায় আছে। মাদক, আসন বরাদ্দ নিয়ে অব্যবস্থাপনা, অস্ত্র যাতে না থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে যা করণীয় আমরা করব’।
মতবিনিময় সভায়ই এক প্রশ্নের জবাবে ২০২০ সালের মধ্যেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন আয়োজন করা বলে জানান চবি উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। অবরোধ আহ্বান, হল ব্যবস্থাপনাসহ আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন