রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এর বলি হচ্ছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে করে ফেল করিয়ে দেওয়া, পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন তোলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আলী আসগর একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করার পর একই অভিযোগে পাল্টা জিডি করেন অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এতে করে শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যেই গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। যার ফল ভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিপক্ষ কোনো শিক্ষককের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথা বলতে দেখলে আরেক গ্রুপের শিক্ষক সেই শিক্ষার্থীর ওপর মনঃক্ষুণ্ন হচ্ছেন।
অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম জিডিতে অভিযোগ করেন, অধ্যাপক আলী আসগরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন অধ্যাপক আসগর আলী। অপরদিকে বিভাগ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে করা রিট তুলে না নিলে অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম তার ক্ষতি করবেন এমন অভিযোগ এনে জিডি করেছেন অধ্যাপক আলী আসগর।
তাদের এই জিডির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীদের অ্যাগ্রোকেমিস্ট্রি ও বায়োকেমিস্ট্রি-২ মিলিয়ে একত্রে ৫০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়। অ্যাগ্রোকেমিস্ট্রি কোর্সটি পড়ান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং বায়োকেমিস্ট্রি কোর্সটি অধ্যাপক আলী আসগর ও অধ্যাপক যুগোল কুমার সরকার যৌথভাবে পড়ান। নিয়ম অনুযায়ী যারা ব্যবহারিক পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন মূল নম্বরপত্রে অবশ্যই তাদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। কিন্তু পরীক্ষার দিন অধ্যাপক যুগোল কুমার উপস্থিত থাকলেও ব্যবহারিকের মূল নম্বরপত্রে তার স্বাক্ষর নেই। মূল নম্বরপত্রে শুধু অধ্যাপক আলী আসগর ও অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের স্বাক্ষর রয়েছে।
অধ্যাপক যুগোল কুমার বলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ওই কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষায় তিনজন শিক্ষার্থী পাশ মার্ক থেকে দু-এক মার্ক কম পায়। ব্যবহারিকে ফেল করলে শিক্ষার্থীদের পুনরায় ওই বর্ষেই থাকতে হয়। তাই অধ্যাপক আলী আসগরকে অনুরোধ করেছিলাম বিশেষ বিবেচনায় পাশ করিয়ে দেওয়া যায় কি না। তিনি শোনেননি। মূল নম্বরপত্র তৈরি করে তার সঙ্গে খসড়া কপি সংযুক্ত করে আমার স্বাক্ষর ছাড়াই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।
তবে অধ্যাপক আলী আসগর বলেন, যখন নম্বরপত্র তৈরি করেছি তখন অধ্যাপক যুগোল কুমার অনুপস্থিত ছিলেন। আর অধ্যাপক যুগোল কুমারের হাতে দু-একজন শিক্ষার্থী ফেল করে। তিনি আমাকে সেসব শিক্ষার্থীকে জোর করে পাশ করিয়ে দিতে বলেন। আমি দিইনি। তাই স্বাক্ষরও করেনি।
অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের অবৈধ পন্থায় ফেল করিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে গত ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ দেন অধ্যাপক আলী আসগর। এর আগে অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রারের কাছে অসদাচরণের লিখিত অভিযোগও করেন তিনি।
নাম গোপন রাখার শর্তে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক আছেন যারা তাদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নাম্বার দেন। যাদের অপছন্দ হয় তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে তারা ফেলও করিয়ে দেন। আমরা এমনটি আর দেখতে চাই না। বিভাগে ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক বজায় থাকুক আমরা সেটাই চাই।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। বিভাগের একাডেমিক সভায় আমি শিক্ষকদের পরস্পরের ভুল বোঝাবুঝি থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করেছি। আমি আবারও এ বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন