বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে মাদক সেবনের আস্তানা। এসব স্থানে সরেজমিনে পরিদর্শনে ফেনসিডিল, মদ ও বিয়ারের খালি বোতলের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তাপ্রহরী থাকলেও মাদকসেবীদের ভয়ে অনেকটা অসহায় তারা। দীর্ঘদিন ধরে এসব স্থানে মাদকের আস্তানা গড়ে উঠলেও অজ্ঞাত কারণে বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা শোনা যায়নি। পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি থাকলেও প্রশাসন মাদকসেবীদের শনাক্তে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের মূল অডিটোরিয়ামের পেছনে, মূল ক্যাফেটেরিয়া চত্বরের সামনে, স্থাপত্যকলা বিভাগসহ বিভিন্ন স্থানে ফেনসিডিল, বিয়ারসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের খালি বোতলের স্তূপ পড়ে আছে।
ক্যাম্পাসের একাধিক শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সন্ধ্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আড্ডা বসে। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে চলে মাদক সেবন। বুয়েট ক্যাম্পাসজুড়ে প্রায় দেড়শ নিরাপত্তাপ্রহরী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তারা ভয়ে বাধা দেন না। অনেক সময় কিছু বললে মাদকসেবীরা মারধর করতে তেড়ে আসেন এবং ভয়ভীতি দেখান।
শুধু মাদকসেবন নয়, নানা অশ্লীল কার্যক্রমও চলে বলে তারা জানান। বারবার প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।
সম্প্রতি আবরার হত্যাকাণ্ডের পর মাদক সেবন ও অশ্লীলতা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের পক্ষ থেকে কয়েক দফা লিখিত সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- রাত ১০টার পর কোনো ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন না। রাত ১২টার পর সব ফটকে তালার ব্যবস্থা করতে হবে। স্থাপত্যকলা বিভাগে সন্ধ্যার পর কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেন না; শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় একজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে রাত ৯টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারবেন। বিভিন্ন বিভাগের সামনে রাজনৈতিক কর্নারগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। এছাড়া আবাসিক হলের চারপাশে অস্থায়ী দোকান না বসাতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থাপত্যকলা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, বুয়েটের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর আড্ডা জমান। তাদের সঙ্গে মেয়েরাও থাকেন। তাদের কেউ কেউ মাদকসেবন করে এখানে-সেখানে সেবনের উপকরণ ফেলে রাখেন।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মাঝে মাঝে সাবেক শিক্ষার্থীদেরও মাদকসেবন করতে দেখা যায়। বুয়েট প্রশাসনও এ বিষয়ে অবগত। এটা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যেও আলোচনা হয়। তিনি বলেন, এসবের ফলে বুয়েটের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে। যেসব জায়গায় এসব হচ্ছে আমরা সেসব জায়গায় পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি স্থাপত্যকলাসহ যেসব ভবনে বহিরাগতদের অনৈতিক কার্যক্রম চলে সে বিষয়ে ভিসি, রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়ে কোনো নিয়মকানুন করা যায় কি-না, সেসব বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।’ এ বিষয়ে দায়িত্বে আছেন রেজিস্ট্রার। তিনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এ এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। বহিরাগতরা মাদক সেবন করে এখানে খালি বোতল ফেলে যায়। তবে এসব কাজে আমাদের শিক্ষার্থীরা জড়িত কি-না, তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তাপ্রহরীকে এ ব্যাপারে আরও নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।’
সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। জানা যায়, আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কেউ কেউ মদ্যপ ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা চান শিগগিরই এসব অপকর্ম বন্ধ হয়ে বুয়েট একটি সুন্দর-শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে উঠুক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন