ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভর্তি করার সময় তার নামের পাশে একটি করে হলের নাম যুক্ত করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সিট ফাঁকা হলে কোন রুমে কে উঠবে সেই সিদ্ধান্ত দেয়ার একচ্ছত্র এখতিয়ার বর্তমানে ছাত্রলীগের হাতে।
ছাত্র সংগঠনটির অধীনে হলে ওঠার পর সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর ঠাঁই হয় গণরুমে। সেই রুমে বসবাস করে অন্তত ২৫-৩০ জন। কোনো কোনো গণরুমে রাতের বেলা এককাত হয়ে ঘুমাতে হয়, শিক্ষার্থীরা ঘুমানোর এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘ইলিশ ফালি’।
গেস্টরুমে সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের। দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে এবং বড় ভাইকে সালাম না দিলে বাবা-মা’র নামে গালি হজম করা নিত্যকার ঘটনা। চড়-থাপ্পর ও ধাক্কা দিয়ে ফেলা দেয়া থেকে শুরু করে নানা সময় আসে নিষ্ঠুর নির্যাতনেরও খবর।
গেস্টরুমের আজব-অদ্ভুত নিয়মের মধ্যে রয়েছে- কেউ কোনো কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে না পারলে, কিংবা বাড়ি গেলে দেখা করে বা ফোন করে ছুটি নিতে হয় বড় ভাইদের কাছ থেকে।
তবে ছাত্রলীগের অনেকেই বলে থাকেন, একজন কর্মীকে আদর্শ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলে গণরুম-গেস্টরুম। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, অক্সফোর্ডে-ক্যামব্রিজে এমন গণরুম-গেস্টরুম প্রথা নেই। তাহলে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে কেন এটি জরুরি? শিক্ষার্থীরা গণরুম ব্যবস্থা তুলে না দিয়ে তা ছাত্রলীগের পরিবর্তে হল প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দাবি জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে প্রায় শ’খানেক গণরুম রয়েছে। এর মধ্যে মেয়েদের পাঁচ হলে হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা গণরুমে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে থাকতে পারছেন।
তবে ডাকসু নির্বাচনের পর গেস্টরুমে নির্যাতনের ঘটনা অনেকটাই কমেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ডাকসুর এজিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রিত গণরুমগুলোতে সম্প্রতি গেস্টরুম প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য গ্রুপগুলোতে গেস্টরুম ব্যবস্থা বহাল তবিয়তেই চলছে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, গণরুম বলতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রতিটি রুমই গণরুম। যেসব রুমে ৪ জনের সিটে ১০ জন করে থাকে সেগুলোও তো গণরুমের মধ্যে পড়ে।
আর গেস্টরুমের বিষয়ে বলব, সেখানে কাউকে নির্যাতন করা হয় না। কারো গায়ে হাত তোলা ফৌজদারি অপরাধ। এমন অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, আমাদের কর্মী হলে আমরাও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, পূর্বে যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে আমার আহ্বান প্রক্টরিয়াল টিমকে জানান। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেব।
শীর্ষনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন