আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা ঝোপে-ঝাড়ে অশালীন কাজ করছে, সারারাত থাকছে: ভিসি
25 Sep, 2019
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কটূক্তি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেছেন, আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরাঝোপে-ঝাড়ে অশালীন কাজ করে বেড়াচ্ছে; সারারাত থাকছে।
আন্দোলনের জন্য সাংবাদিকদের দায়ী করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা বলে দিচ্ছেন- এভাবে দাঁড়াও, ওভাবে নাচ। সংবাদ কাভার (প্রচার) বন্ধ রাখেন, দুই ঘণ্টায় সমাধান হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
ড. নাসির উদ্দিন বলেন, আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের বের করতে দেবেন না, অথচ দেখেন তারা রাস্তায় রাস্তায়, ঝোপে-ঝাড়ে অশালীন কাজ করে বেড়াচ্ছে; সারারাত থাকছে। তাদের ইনভাইটেড গেস্ট (আমন্ত্রিত অতিথি), অছাত্ররাও এসে রাত কাটাচ্ছে। হোয়াট ইস দিস?
তিনি আরও বলেন, ভিসি (ভাইস চ্যান্সেলর/উপাচার্য) অপসারণের জন্য আপনারা দাবি করতে পারেন, মানববন্ধন করতে পারেন। কিন্তু আড়াই কোটি টাকার ভুল তথ্য পেপারে দিয়ে ভিসি তাড়াতে হবে এটা তো ঠিক না।
আমি একজন ভাইস চ্যান্সেলর চলে গেলে সমস্যা নেই, চলে যাব। কিন্তু এমন করলে তো ৪২ ভাইস চ্যান্সেলরের একজনকেও রাখা যাবে না। তিন মাস পর পর নতুন ভিসি নিয়োগ দিতে হবে’ যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, আমি সাংবাদিকদের ভাইদের বললাম, আপনারা আমার সাথে বসেন। সমাধান ৫ মিনিটে। আপনারা এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। কিন্তু আপনারা আমাদের কথাগুলো লিখছেন না।
আপনারা তাদেরকে (আন্দোলনের) ডিরেকশন (নির্দেশনা) দিচ্ছেন, তাদের বক্তব্য লিখে দিচ্ছেন। বলে দিচ্ছেন- এভাবে দাঁড়াও, এভাবে নাচ। এটা তো ঠিক না। হোয়াট ইস দিস? প্রশ্ন করেন তিনি।
একপর্যায়ে হতাশার সুরে নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কন্ট্রোল নেই; সব ছেলেমেয়েরা নিয়ে নিয়েছে। আমাদের দুজন অফিস যাচ্ছিল, তাদেরকেও রাজাকার রাজাকার বলে গালিগালাজ করেছে; অথচ তারা বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। আরেক অফিসার ফাইল আনতে গেলে তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতি, অনিয়ম, নারী কেলেঙ্কারি ও বাক-স্বাধীনতা হরণের অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পদত্যাগ দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একাডেমিক ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন তারা।
এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অনশনের তৃতীয় দিন শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে প্রশাসন। একই সঙ্গে সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে গেলে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে সোবহান সড়কে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় উপাচার্যপন্থী শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। এতে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
পরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির। হামলা ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে বুধবার রাত ১২টার দিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়াসহ আরও কয়েকটি দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেও গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন