সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করে ২ হাজার ৭৩৯ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে ফেল করা শতাধিক শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়ে চমক তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩০৯ জন। ফেল থেকে পাস করেছেন ৬১৩ জন। প্রতি বছরের মতো এবারও এত বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তনের পেছনে পরীক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গত তিন বছর ধারাবাহিক গাফিলতির কারণে ১ হাজার পরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যায়যায়দিন
জানা গেছে, খাতা মূল্যায়নে ধারাবাহিক গাফিলতি করেছেন এরকম ১ হাজার ২৬ জন পরীক্ষককে তারা চিহ্নিত করেছেন। বোর্ডের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে বোর্ডগুলো অভিযুক্ত বেশিরভাগ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করে। এর ফলে ওই পরীক্ষক সারা জীবনের জন্য কোনো বোর্ডের পরীক্ষক হতে পারবেন না। তবে যেসব পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নে কেলেঙ্কারি বা ক্রাইমে যুক্ত হন, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ এবং চাকরিচ্যুতির নজির আছে।
এ ব্যাপারে আন্তঃবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আবুল বাশার বলেন, চিহ্নিত পরীক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী এ ব্যবস্থা তারা নিয়ে থাকেন। সাধারণত অভিযুক্ত বেশিরভাগ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। অপরাধের মাত্রা বেশি হলে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে তারা সুপারিশ করেন।
এ অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকদের সময় বাড়ানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ একশ’ খাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। একই সঙ্গে খাতা পুনঃনিরীক্ষণে শুধু যোগফল দেখার পাশাপাশি ফের খাতা মূল্যায়নের দাবি ছিল তাদের। কিন্তু এ দাবি নাকচ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এটা করার কোনো সুযোগ নেই। খাতা পুনঃনিরীক্ষণের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে গেলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। এতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তাই তারা খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকদের আরও যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনার ব্যবস্থা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, পরীক্ষকদের উদাসীনতায় পাবলিক পরীক্ষায় অসংখ্য শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছেন না। বঞ্চিত হয়েছেন সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ থেকে। ফল প্রকাশের পর এসব শিক্ষার্থী চ্যালেঞ্জ করলেও প্রায় তিন হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। উত্তরপত্র নতুন করে মূল্যায়ন করলে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তবে প্রতি বছরই এ ঘটনা ঘটলেও দায়ী শিক্ষকরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। দ্রম্নত সময়ে ফল প্রকাশ করতে গিয়ে পরীক্ষকদের দ্রম্নত সময়ে খাতা মূল্যায়ন করার একটা চাপ থাকে। ভুলগুলো এ চাপের কারণে বেশি হয় বলে মনে করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ভুলগুলো যারা সব সময় করে থাকেন এরকম প্রায় ১ হাজার পরীক্ষককে চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে ১০টি শিক্ষাবোর্ড। গত তিন বছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যারা খাতা মূল্যায়নে ধারাবাহিক অবেহলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই প্রকাশ হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। তাতে পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পায় ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। ফল প্রকাশের পরদিন থেকেই ফলাফলে আপত্তি থাকলে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। পুনঃনিরীক্ষণ শেষে গত শুক্রবার আলাদাভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করেছে। যেখানে ফলাফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। ফলাফলে বিশাল এই সংখ্যা পরিবর্তনের পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রম্নত সময়ের মধ্যে খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে এ ভুলগুলো হচ্ছে। ভুলগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের পর খাতায় নম্বরের যোগফলে ভুল, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি এবং ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাট করতে গিয়ে বেশি ভুল করছেন। পরীক্ষকরা জানান, এসব ভুলের অন্যতম কারণ পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো, উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কিনা। এসব পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন