ডাকসু পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনড় রয়েছে বিরোধী জোটের নেতারা। তাদের দাবি নির্বাচনে ঢাবি প্রশাসনের সহযোগিতায় বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে। তাই ৩ দিনের মধ্যে পুনঃ তফসিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। ক্রমেই জটিলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত পরিস্থিতি এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে বুধবার দুপুরে ছাত্রলীগ বাদে ভোট বর্জনকারী ডাকসুর পাঁচটি প্যানেল পুনর্নির্বাচন চেয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে কাছে স্মারকলিপি নিয়ে যায়। স্মারকলিপি প্রদানের পর উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন লিটন নন্দী।
এসময় আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনঃ তফসিল দেওয়া না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিতে বাধ্য হব বলে মন্তব্য করেন বাম ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনঃ তফসিল দেওয়া না হয়, একই সঙ্গে এই নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁরা যদি পদত্যাগ না করেন এবং মামলা প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব রক্ষার্থে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিতে বাধ্য হব।’
অপরদিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ ও বাম জোটের প্রার্থীরা। ছাত্রলীগ বলছে, হল সংসদে ইউনিয়ন পূর্ণ প্যানেল দিতে পারে না। তারা কী জয় প্রত্যাশা করে! অপরদিকে ‘নির্বাচনে কারচুপি ও নানা অনিয়ম করে রাজু দিবসে তার ভাস্কর্যের নিচে বেহায়ার মতো অবস্থান’ নেওয়ার প্রতিবাদে একই স্থানে পাল্টা অবস্থান নিয়েছেন হল সংসদে অংশ নেওয়া বাম জোটের প্রার্থী ও সমর্থকরা।
বুধবার দুপুরের পর থেকে এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কর্মী ও সাধারণ ভোটারের ব্যানারে অবস্থান নেয়। তাদের এই অবস্থান নেওয়ার প্রতিবাদে বিকেল থেকে পাল্টা অবস্থান নিয়েছে হল সংসদে বাম জোটের প্রার্থী-সমর্থকরা।
দু’পক্ষই প্ল্যাকার্ড নিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে। তাদের পেছনে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে তিনটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে আছেন স্যার এ এফ রহমান হলের ১০-১২ জন শিক্ষার্থী। হলের এই শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘আমার হলে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থীই ছিল মাত্র ৩ জন। এবার বলুন ১৩টি পদের হল সংসদ নির্বাচনে আপনারা কিভাবে জয় আশা করেন? আপনি জিতলে সুষ্ঠু, আমি জিতলে কারচুপি?
এপ্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সমর্থিত এক শিক্ষার্থী বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যেসব ভুল ত্রুটি ছিল সেগুলো কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নির্বাচন অনষ্ঠান করেছে। যেসব পোস্টে বাম ও স্বতন্ত্ররা জয় লাভ করেছে, সেগুলোতে কোনও ঝামেলা নেই। যেসব পদে জয় পায়নি সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এসব কথা হাস্যকর। তারা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এসব দ্বিমুখী আচরণের প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই, ক্যাম্পাসে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা হোক। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাক।
অন্যদিকে, ভোটে কারচুপি করার পরও নির্লজ্জের মতো রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থানের প্রতিবাদে পাল্টা অবস্থান নিয়েছেন একই হল সংসদে বাম জোটের প্যানেল থেকে অংশ নেওয়া প্রার্থী ও সমর্থকরা। তাদের প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা রয়েছে, রাজু চত্বর বেহায়াদের জন্য নয়; এখানে নির্বাচন বেচা হয়; একটি সিটের বিনিময়ে বিবেক বেচার দল; এফ রহমান হলের তিন প্রার্থীর একজন আমি। জানি তো, কী ঘটেছিল; ভিসিত্র নির্বাচন; প্রশাসনের মেরুদণ্ড নাই। ছিঃ!
এফ রহমান হলের তিন প্রার্থীর একজন আব্দুল করিম। তিনি হল সংসদে এজিএস প্রার্থী ছিলেন। করিম বলেন, আজ ১৩ মার্চ, রাজু দিবস। আজকের এই দিনে যারা ডাকসু নির্বাচনে কারচুপি করেছে, তারাই ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ দাবি করছে। প্রশাসন নোংরাভাবে যে পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করেছে, সেটার সমর্থন করছে। আমাদের ভাইরা এখানে আমরণ অনশন করছে, তাদের সামনে বসে তামাশা করে। আমরা এসব ঘটনার মৌন প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসেছি।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজে এখানে বসেছি। কারণ, হলের তিনজন প্রার্থীর একজন আমি। প্রার্থী হয়েও আমাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাধা দেওয়া হয়েছে। ভুয়া লাইন তৈরি করে রাখা হয়েছে। কীভাবে নির্বাচন হয়েছে, কেউ জানতে চাইলে তাদের জানাতে ও প্রতিবাদ করতে আমি বসেছি।
উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন