*সনদ স্থগিত ২ জনের এবং ১ জনের ছাত্রত্ব বাতিল
জঙ্গিবাদে সম্পৃক্তা, ভর্তি জালিয়াতি, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী মারধর, মোবাইল-ল্যাপটপ চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সনদপত্র স্থগিত ও ছাত্রত্ব বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদের মধ্যে ১৩ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সাবেক দুই শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত এবং এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ্ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানান প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের ২৮ অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের ভর্তি জালিয়াতির দায়ে বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. জামশেদুল কবির ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেনের সনদ স্থগিত করা হয়েছে। একই ঘটনায় আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মোশাররফ হোসেন শিকদারকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গত বছরের ১ মার্চ নগরীর সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীভু দাশগুপ্তের হয়ে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে চবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ ফাহিম জাফরিকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. মাঈন নেওয়াজের ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হলের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে ল্যাপটপ, মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাইয়ের ঘটনায় রসায়ন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের মিজানুর রহমান ফকিরকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় উস্কানি ও প্ররোচনার দায়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইমরান নাজির ইমন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জিয়াউল হক মজুমদারকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এমদাদুল হক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ফাহিম হাসানকে মারধরের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন— লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দ্বীপায়ন দেব ও সাব্বিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের অর্ণব বড়ুয়া ও আরবী বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জুবায়ের আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল, নগদ অর্থ ছিনতাই ও তাদের মারধরের ঘটনায় ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেনকে এক বছরের জন্য এবং অর্থনীতি বিভাগের মামুনুর রশিদকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাব্বিরকে গত বছর সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দুই মাস বহিষ্কার করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের অপব্যবহার ও বাঁধা দিলে কর্মচারীদের হুমকি দেয়ার দায়ে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এইচএম হাসানুজ্জামানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের ১৪ এপ্রিল জঙ্গি সম্পৃক্তার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. আজফার হোসেনসহ ছয়জনকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর আজফারকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠির কোন জবাব না দেয়ায় তার ওই বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সাংবাদিকদের আরো বলেন, বহিষ্কৃতদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিষিদ্ধ ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বহিষ্কারাদেশ, সনদ স্থগিত ও ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ আজ থেকে কার্যকর হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন