দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ডাকসুকে বলা হয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে ডাকসু। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ডাকসু।
ডাকুস নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ব্রেকিংনিউজের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ : ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল কেমন হতে পারে?
শোভন : ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯র গণঅভ্যুত্থান, ৭১র মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনে থেকে ভূমিকা পালন করেছে। আগামীতেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় বিশ্বাসী তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। ছাত্রলীগ ডাকসুতে এমন একটি প্যানেল দিবে যেখানে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদেরও স্থান দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যে টিএসসির বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আমাদের যোগাযোগ চলছে।
ব্রেকিংনিউজ : ধর্মভিত্তিক কোনও ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারবে না বলে পরিবেশ পরিষদ অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ। তবে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
শোভন : ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশন যে সিদ্ধান্ত নিবে ছাত্রলীগ তা মেনে নিবে। আমার চাই দীর্ঘ ২৮ বছর পর হলেও ডাকসু নির্বাচন হোক। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার। বাংলাদেশ সৃষ্টিসহ প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। প্রগতিশীল জায়গা থেকে আমার আলোর পথে সত্য ও সুন্দরের জায়গায় চলতে চাই। সেই জায়গা থেকে মনে হয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নিবে। আর অলিখিত ভাবে তো বলাই আছে ক্যাম্পাসে ধর্ম ভিত্তিক কোনও রাজনীতি চলবে না।
ব্রেকিংনিউজ : হলের বাহিরে ভোট কেন্দ্র কারার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদলসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের বক্তব্য কী?
শোভন : টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো হলেই ভোট কেন্দ্রের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে। আবার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দাবিও হলেই ভোট কেন্দ্র হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেটা ভাল মনে করবে, সেটাই তারা করেবে। আমাদের দাবি হলেই ভোট কেন্দ্র হোক।
ব্রেকিংনিউজ : ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নিবার্চন পেছানোর দাবিকে কিভাবে দেখছে ছাত্রলীগ?
শোভন : নির্বাচন পেছানোর কোনও প্রশ্নই উঠে না। এর আগে তিনবার ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই নির্বাচন আর হয়ে ওঠেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে নির্বাচন হোক। নির্বাচন যদি আবার পিছিয়ে যায়, ডাকসু নিয়ে আবারও ধুম্রজাল সৃষ্টি হবে। তাহলে আর ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা চাই ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
ব্রেকিংনিউজ : ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের কোনও ইশতেহার থাকবে কি না?
শোভন : আমাদের ইশতেহার অবশ্যই থাকবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যও আমাদের ইশতেহারে চমক থাকবে। ইশতেহারে কোন কোন বিষয় রাখা যায় আমরা সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আমরা কিছু আইডি বের করেছি। আরও কিছু সংযুক্ত করবো।
ব্রেকিংনিউজ : ডাকসু নির্বাচনের ছাত্রলীগ বিজয়ী হলে কী কী কাজ করবে?
শোভন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে হারে অন্যন্য সুবিধা বৃদ্ধি পায়নি। ছাত্রলীগ সব সময় সাধারণ ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে। আগামী ডাকসু নির্বাচনে যদি ছাত্ররা ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করে তাহলে আমরা তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিব। আবাসন, খাদ্য ও লাইব্রেরি সমস্যা দূর করার জন্য কাজ করব। কারণ যদি ভাল খাবারের ব্যবস্থা করা যায় ও আবাসন সংকট দূর করা যায় তাহলে ছাত্রদের মেধা আরো বিকাশিত হবে। আপনারা হয়তো জানেন, বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি খোলা রাখা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে রাত ৯টার পর বন্ধ করে দেয়া হয়। আমরা চেষ্টা করবো যাতে আমাদের লাইব্রেরি সারা রাত খোলা রাখা হয়।
ব্রেকিংনিউজ : ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য ছাত্রলীগের কোনও বক্তব্য আছে কি না?
শোভন : ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে। ভাষা আন্দোলনের অবদান রেখেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তরুণ প্রজন্মে একত্রিত করে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিতে চায়। যে নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সুন্দর উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করবে। বিশ্বের অন্যান রাষ্ট্র বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করবে। আমি প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বলবো- যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে তাদেরকে যেন ভোট দেয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে না তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করবে।
ব্রেকিংনিউজ : সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শোভন : আপনাকে ও ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন